প্রতীকী ছবি।
পূর্বাভাস ছিল ছেলেভুলানো ছড়ার ইলিশ নাকি এবার সত্যি সত্যি নেচে বেড়াবে কলকাতা থেকে কোচবিহার। লকডাউনে দূষণহীন নির্মল নদী পেয়ে রুপোলি রাজপুত্র নাকি আপন খুশিতে জালে ধরা দেওয়ার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটবে দীঘা থেকে ডায়মন্ডহারবার, ফরাক্কা থেকে বলাগড়। ইলিশের ডিম পাড়ার সময় এবার পূর্ণ লকডাউন চলায় এমনটাই আশা করেছিলেন বিজ্ঞানী থেকে ব্যবসায়ী সকলেই।
কিন্তু সে আশায় ছাই দিয়ে বাস্তবে ঘটল ঠিক উল্টো। গোটা বর্ষা হা হুতাশ করে কাটানোর পর শেষ বাজারে ‘বাংলাদেশের’ ইলিশ নামে যাদের দেখা মিলল, তার দাম শুনে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় গড়পড়তা বাঙালির। ন’শো, এক কিলোগ্রাম বা আর একটু বেশি ওজনের ইলিশের দাম কিলোগ্রাম প্রতি ১৮০০ টাকা! পরের দিকে দাম খানিক কমে হল ১৫০০-১৪০০ টাকা। রবিবার নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর বা রানাঘাটের বিভিন্ন বাজারে ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কিলোগ্রাম ১২০০ টাকার আশপাশে। পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী থেকে খুচরো মাছ বিক্রেতারা স্পষ্ট জানাচ্ছেন আপাতত দাম কমার কোনও সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না।
সামনেই পুজো। এই সময় ইলিশের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। আসলে পুজোর ক’টা দিন বাঙালির খাবারের তালিকায় সেরা পদগুলোই জায়গা পায়। আর সে তালিকায় ইলিশ থাকবে না? অসম্ভব। পাশাপাশি অনেক পরিবারে বিজয়া দশমীর দিন জোড়া ইলিশ খাওয়ার চল আছে। এবারের মতো ইলিশ খাওয়া শেষ ওই দিন। এরপর বেশ কয়েকমাস বাদে ইলিশ ঢুকবে হেঁসেলে। তাই দশমীর দিনে ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু হাজার বারোশো টাকা কিলোগ্রাম দরে এই করোনা আবহে কত জন জোড়া ইলিশ কিনতে পারবেন সে প্রশ্নটা উঠছেই।
রানাঘাট রেল বাজারের মাছ বিক্রেতা পবিত্র সরকার বলেন, “অন্য বছর পুজোর সপ্তমী,নবমী আর দশমীর দিনে ইলিশের প্রচুর চাহিদা থাকে। এবারও সেই হিসাবে ইলিশের চাহিদা থাকবে। তবে দামটাও কিন্তু আরও বাড়বে।” চাকদহ বাজারের মাছ বিক্রেতা ভরত বিশ্বাস রবিবার কমবেশি আটশো গ্রামের ইলিশ ১২০০ টাকা এবং এক কিলোগ্রামের উপরের ইলিশ ১৪০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করেছেন। তাঁর কথায়, “পুজোর সময় মাছের জোগানে কোনও সমস্যা হবে না। তবে ওই দামে কত জন কিনবে সেটাই চিন্তার।”
তবে নবদ্বীপ আগমেশ্বরী বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী বাদল হালদার বলেন, “ইলিশ কোথায় যে কেনাবেচা হবে? এবারের মতো শেষ। আগামী সোমবার দশমীর সঙ্গে সঙ্গে ইলিশ খাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে।’’