সরপুরিয়ার জন্য প্রার্থনা কৃষ্ণনগরের

পশ্চিম বাংলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম কর্তা, বহরমপুরের বিজয়গোপাল সাহা হেসে বলেন, ‘‘এই গল্প চলে আসছে মুখে-মুখে। কোনও প্রামাণ্য তথ্য বোধহয় নেই।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০০:২০
Share:

সে এক আমল ছিল। সাহেব বণিকদের তাক লাগাতে ডাইনিং টেবিলে এক দেড়মণি পেল্লায় ছানাবড়া সাজিয়ে তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন নবাবেরা। তার পরে বিদেশি বণিকদের হাতে রুপোর ছুরি তুলে দিয়ে তাঁদের বলতেন, ‘‘বাংলার কেক খাও!’’

Advertisement

পশ্চিম বাংলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম কর্তা, বহরমপুরের বিজয়গোপাল সাহা হেসে বলেন, ‘‘এই গল্প চলে আসছে মুখে-মুখে। কোনও প্রামাণ্য তথ্য বোধহয় নেই।’’

আসলে প্রশ্নটা ছিল, বাঙালির কি কেবল রসগোল্লাই আছে? আর কিছু নেই তার অস্তিত্বে জড়িয়ে-মড়িয়ে? বহরমপুরের ছানাবড়া বা কৃষ্ণনগরের সরভা়জা-সরপুরিয়া নেই? রানাঘাটের পান্তুয়াই বা বাদ যাবে কেন?

Advertisement

বহরমপুর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাধন ঘোষের কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদের ইতিহাসবিদ বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা থেকে জানা যায়, কাশিমবাজারের মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী নিজে মিষ্টান্ন কারিগর পটল ওস্তাদকে ছানাবড়া তৈরির বরাত দিতেন।’’ এ কালেই বা কম কী? প্রয়াত রাজ্যপাল সৈয়দ নুরুল হাসানকে ৬০ কেজির ছানাবড়া দিয়ে সম্মান জানানো হয়েছিল। ২৭ বছর আগে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকে ২১ কেজির ছানাবড়া ভেট দিয়েছিলেন বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। উপঢৌকন পেয়েছেন বিজেপির নিতিন গডকড়ী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজেরাও।

এখন এই ছানাবড়ার ভৌগোলিক চিহ্নিতকরণ (জিআই) তকমা পেতে উন্মুখ বহরমপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। বহরমপুর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সহ-সম্পাদক বিজয়গোপাল সাহা বলেন, ‘‘বর্ধমানের সীতাভোগ বা বাংলার রসগোল্লা যদি জিআই পেতে পারে, বহরমপুরের ছানাবড়া নয় কেন?’’

সরপুরিয়া-সরভাজার ‘জিআই’ পেতে আবেদন করেছেন কৃষ্ণনগরের ব্যবসায়ীরা। কেন্দ্রীয় সরকারের যে সংস্থা জিআই তকমা দেয়, সেখানে মাস দেড়েক আগে সরপুরিয়া ও সরভাজা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাদ পরীক্ষার জন্য। কৃষ্ণনগর মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতির সহ-সম্পাদক তাপস দাস জানান, “প্রায় এক বছর আগেই আবেদন করেছি।”

ছানা, চিনি, ক্ষীর, ছোট এলাচ, কাঠবাদাম, পেস্তা ও সর দিয়ে তৈরি সরপুরিয়া বা ক্ষীর, চিনি ও সরে গড়া সরভাজার উল্লেখ রয়েছে ষোড়শ শতকে কৃষ্ণদাস কবিরাজের রচিত শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে। তারা একান্তই নদিয়ার নিজস্ব। গত বিধানসভা ভোটের আগে কৃষ্ণনগরে দলীয় সভায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সরপুরিয়া-সরভাজার জনপ্রিয়তার কথা বলে গিয়েছিলেন।

পান্তুয়ার জন্মবৃত্তান্ত আবার পাক খায় রানাঘাটে। শোনা যায়, সেখানে পালচৌধুরী বাড়িতে মিষ্টি তৈরির সময়ে বৃন্দাবন নামে এক ময়রা ছানার গোলা তৈরি করে ঘিয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। তাতে সুন্দর রং আসে। শেষে সেটা রসের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। সেই নাকি পান্তুয়ার জন্ম! পরে পান্তুয়াকে একটা উচ্চতায় পৌঁছে দেন হরিদাস পাল। রানাঘাট স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে তাঁর দোকান অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে বছর তিরিশ আগেই।

গবেষক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “কল্যাণীতে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন চলার সময়ে হরিদাস পাল দশ কেজি ছানায় একটি পান্তুয়া তৈরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। জওহরলাল নেহরু, বিধানচন্দ্র রায়রা তাঁর বিশেষ প্রশংসা করেন।” স্থানীয় মিষ্টি বিক্রেতা তাপস খাঁয়ের মতে, “রানাঘাটের পান্তুয়াও জিআই পেতে পারে। আমরা সেটাই চাইছি।”

কোন ময়রার আঁতুড়ে গোকুলে বেড়েছিল কোন মিষ্টি, তা নিয়ে তরজা হচ্ছে হোক।

হাজার হোক, মিষ্টি কথাই তো!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement