সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতিই বিজেপির জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যেই রানাঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্টার দেখা গেল রানাঘাট শহর এবং গ্রামীণ এলাকায়। যেখানে সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি দলের জেলা কমিটি নিয়েও একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে। একে তৃণমূলের কুৎসা বলে ব্যাখ্যা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে যে ভাবে দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও অভিযোগ তোলা হয়েছে তাতে এটা বিজেপির ঘরোয়া কোন্দল বলে দাবি তৃণমূলের।
বুধবার সকালে রানাঘাট শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় বেশ কিছু টাইপ করা পোস্টার দেখা যায়। রানাঘাট শহরে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কার্যালয়ের কাছে, কোর্টমোড়ের কাছে, রানাঘাট ২ ব্লকের নোকারি এলাকাতেও এই ধরনের পোস্টার দেখা গিয়েছে। পোস্টারে জগন্নাথ সরকারের নামের পাশাপাশি ‘জগা’ কথাটি উল্লেখ হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘জগা হঠাও, বিজেপি বাঁচাও’। পাশাপাশি লেখা হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতক জগার কমিটি বাতিল করতে হবে।’ আবার কোনও জায়গায় লেখা হয়েছে, ‘জগা একাদশ মানছি না মানব না। গণতান্ত্রিক দলে ব্যাক্তিতন্ত্র মানছি না। তৃণমূলের সাথে অশুভ আঁতাত করে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ এর সংগঠন শেষ করার ঘৃণ্য চক্রান্ত ব্যর্থ করুন।’ এ ছাড়াও কোনও কোনও পোস্টারে মণ্ডল সভাপতিদের থেকে টাকা নিয়ে এমসে চাকরির কোটা বিক্রি এবং চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
পোস্টার কাণ্ডের পর পুরভোটের আগে অস্বস্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরে। যদিও বিজেপির দাবি, এই মুহূর্তে দলের কেউ এই কাজ করলে বিক্ষুব্ধদের দিকেই সরাসরি আঙুল উঠবে তা তারা জানেন। কাজেই সেই ঝুকি কি নেবেন তারা? বরং বিজেপির অন্দরের কোন্দলকে উস্কে দিতে এই কাজ করা হয়েছে বলে তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছে তারা। যদিও তৃণমূলের দাবি, যে ভাবে বিজেপির অন্দরের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তাতে স্পষ্ট এটা বিজেপির লোকেদেরই কাজ। না হলে তাদের সংগঠনের তথ্য তৃণমূলের জানার কথা নয়। আবার বিজেপির সংগঠন বাঁচানোর ডাক দেওয়া হয়েছে যেভাবে পোস্টারে, তাতে তা বিজেপির লোকেদেরই কাজ বলেই দাবি তৃণমূলের। জগন্নাথ সরকার নিজে বলছেন, “আমি যা উন্নয়নের কাজ করেছি তাতে ভয় পেয়ে কিছু তৃণমূলের দালাল এবং তৃণমূল এই কাজ করছে। তাদের সামনে এসে লড়াইয়ের ক্ষমতা নেই। পোস্টারে যা বলা হয়েছে তার কোনও অভিযোগ কেউ কোথাও জানায়নি। কাজেই এখন পুরভোটের আগে এ সব করে চরিত্রহননের চেষ্টা হচ্ছে। এ ভাবে বিজেপিকে থামানো যাবে না।” জেলা বিজেপির সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ সব নোংরামি আমাদের দলের কারও নয়, তৃণমূলেরই কাজ। দলের মধ্যে যা কিছু মান-অভিমান তা অনেকটাই মিটে গিয়েছে। বাকিটাও দ্রুত মিটে যাবে।”
যদিও একে বিজেপির অন্দরে মুষলপর্ব বলে ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “বিজেপিতে এখন মুষলপর্ব চলছে। নিজেদের ভেতরের ঝামেলা চাপা দিতে এখন আমাদের কথা বলছে। ওদের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট এসব ওদের নিজেদের লোকেদের কাজ। আমরা ওসব নিয়ে ভাবতে যাব কেন।”