রানাঘাট পুলিশ মর্গ। ছবি: সুদেব দাস।
মৃত্যুর পরেও যেন শান্তি নেই! মৃতদেহ কয়েক ঘণ্টা মর্গে রাখলে তা যে অক্ষত থাকবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। কেননা দেখা গিয়েছে, চোখ খুবলে নিয়েছে ইঁদুর। ইঁদুরের উপদ্রবে রানাঘাট পুলিশ মর্গে মৃতদেহ রাখাই এখন দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
পুলিশ মর্গের সংস্কার হয় না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মৃতদেহ রাখার ট্রলি, একাধিক দরজা, জানলা ভাঙাচোরা। আর তাতেই অবাধ আনাগোনা বেড়েছে ইঁদুরের। কখনও তারা মৃতদেহর চোখ ঠুকরে খাচ্ছে। কখনও টুকরো টুকরো করছে মর্গের অফিস ঘরে থাকা কয়েক বছরের পুরনো জরুরি নথিপত্র। ইঁদুরের উপদ্রবে নাস্তানাবুদ মর্গ কর্তৃপক্ষ।
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের এলাকার মধ্যেই রানাঘাট পুলিশ মর্গ। রানাঘাট ছাড়াও মহকুমার অধীন ধানতলা, গাংনাপুর, তাহেরপুর, শান্তিপুর, হাঁসখালি থানা এলাকার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য এই মর্গে এনে রাখা হয়। এছাড়া রেল পুলিশের তরফেও অনেক সময় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের দেহ বা ট্রেনের ধাক্কায় মৃতদের দেহ রাখা হয় রানাঘাটের পুলিশ মর্গে। মর্গে ছয়টি দেহ একসঙ্গে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেই ছয়টি দেহ রাখার ড্রয়ারের দরজা ঠিক ভাবে বন্ধ করা যায় না। মর্গের জানালা দরজার লঝঝড়ে অবস্থা। এমনকি মর্গের পাশে থাকা অফিস ঘরের কাঠের দরজাও ভাঙা।
সূত্রের খবর, মাসে অন্তত ১০০টি ময়নাতদন্ত হয় মর্গে। অথচ এখানে চরম অব্যবস্থা। সেখানকার কর্মীদের কথায়, রিপোর্ট লেখার জন্য বই, কার্বন পেপার মিলছে রানাঘাট থানা থেকে। মর্গ পরিষ্কার করার জন্য ফিনাইল চেয়ে আনতে হচ্ছে কল্যাণী মর্গ থেকে। ভিসেরা জার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, সার্জিক্যাল ক্যাপ, স্যাচুরেটেড স্যালাইন প্রভৃতির সরবরাহ বন্ধ প্রায় তিন বছর ধরে। মর্গের এক কর্মীর কথায়, ‘‘মর্গের পরিকাঠামো ঢেলে সাজা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় সংস্কার হচ্ছে না।’’
আরও জানা গিয়েছে, গত বছর অগস্ট মাসে মর্গের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সংস্কারে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টরের তরফে ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও সেই টাকায় পরিকাঠামোর সামগ্রিক সংস্কার সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্ত করেন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে এমন চিকিৎসকরা জানান, রানাঘাট পুলিশ মর্গে ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। সবার আগে মৃতদেহ রাখার ট্রলি, জানলা দরজা প্রভৃতির সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে ইঁদুরের উপদ্রব আটকানো সম্ভব নয়।
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রহ্লাদ আধিকারী বলেন, "অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদেহ পুলিশ মর্গে রেখে ময়নাতদন্ত করা হয়। যদি ইঁদুর মৃতদেহের চোখ খুবলে নেয় তাহলে ইঁদুরের উপদ্রব আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিষয়টি নিয়ে আমরাও পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি।"
রানাঘাটের মহকুমা শাসক রৌনক আগরওয়াল বলেন, "ওই পুলিশ মর্গের রক্ষণাবেক্ষণ আগে আমাদের অধীনে থাকলেও, বর্তমানে তা পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজনে দ্রুত যাতে পূর্ত দফতরকে দিয়ে মর্গের জানালা, দরজা মেরামত ও অন্যান্য সংস্কারের কাজ করা যায় তার চেষ্টা হচ্ছে।’’