আগাছায় ঢেকে আছে রেজিনগর শিল্প তালুক। — নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের রেজিনগর শিল্পতালুকের প্রবেশপথের অবস্থা দেখেই যেন এক ঝলকে বোঝা যায়, ভিতরের অবস্থাটা ঠিক কী রকম। ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে রেজিনগর শিল্পতালুক লেখা সাইন বোর্ড উঁকি মারছে। প্রবেশপথের লোহার দু’টি গেটে মরচে ধরেছে। একটি সব সময়ের জন্য বন্ধ, অন্যটি অর্ধেক খোলা। নিরাপত্তারক্ষীর অনুমতি নিয়ে শিল্পতালুকের ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। শিল্পতালুকের ভিতরে চার লেনের সূদৃশ্য রাস্তা তৈরি হয়েছিল। ব্যবহার না হওয়ার কারণে সেই রাস্তাতেও আগাছা জন্মেছে। সেই সঙ্গে চারিদিকে ঝোপ জঙ্গল। পথবাতিও অকেজো। সে সবের মাঝে দু’একটি ভবন রয়েছে। সেগুলিও অবহেলায় ঝোপ-জঙ্গলে ভরে উঠেছে। তবে সে সবের মাঝে দু’একটি ইউনিট মাত্র চালু রয়েছে। সেগুলিতে কিছু লোকের আনাগোনা রয়েছে। শিল্পতালুকের এমন অবহেলায় ক্ষুব্ধ জেলাবাসী।
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক স্বপনকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে রেজিনগরে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘ই বাস’ কারখানা গড়ে ওঠার কথা চলছিল। তাতে আমরা আশার আলো দেখেছিলাম। তার পরে যে কে সেই। আমরাও চাই রেজিনগরে ভারী শিল্প আনার ব্যবস্থা করুক সরকার।’’ রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক জানান, ‘‘৩২০টি প্লটের মধ্যে ১৭০টি প্লট ফাঁকা রয়েছে। সেগুলি দেখে অনেকেই অনলাইনে আবেদন করছেন। গোটা চারেক ইউনিট চালু রয়েছে। শিল্পতালুক পুরো দমে চালুর চেষ্টা করছি।’’
পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে চার লেনের ঝকঝকে জাতীয় সড়ক। খানিকটা দূরে রয়েছে লালগোলা-শিয়ালদহ রেলপথ। ২০০৮ সালে বাম আমলে পড়শি জেলা নদিয়া সীমান্ত লাগোয়া রেজিনগরে এমন জায়গায় শিল্পতালুক গড়ে তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম। ২০১১ সালে পালাবাদল হয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু বাম বা তৃণমূল, কোনও আমলেই সাফল্যের মুখে দেখেনি এই শিল্পতালুক। গত ১৬ বছরে সেখানে দু’একটি ইউনিট ছাড়া শিল্পতালুকে কিছুই গড়ে ওঠেনি।
যা নিয়ে জেলার বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন। বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা খরচ করে রেজিনগরের শিল্পতালুক গড়া হয়েছে, অথচ সেখানে শিল্প কারখানা আনার বিষয়ে রাজ্য সরকার তেমন ভাবে উদ্যোগী নয় বলে দাবি।
তবে রেজিনগর শিল্পতালুকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল ২০২২ সালের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে। সে বার ‘কৌশিস ই মোবিলিটি প্রাইভেট লিমিটেডে’ নামে একটি সংস্থা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘ই বাস’ কারখানা গড়বে বলে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তার পরে দু’টি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু ‘ই বাস’ কারখানার কিছুই হয়নি। আদৌ সেই কারখানা শিল্পতালুকে গড়ে উঠবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
শিল্পতালুকে একটি ‘কর্মতীর্থ’ (বাজার) তৈরি হয়। সেখানে একটি দোকানও চালু হয়নি। সেই কর্মতীর্থও জঙ্গলে ভরেছে। যোগাযোগ, জল, বিদ্যুতের ভাল ব্যবস্থা থাকলেও কেন উদ্যোগীরা আসছেন না, সে প্রশ্ন উঠছে।