উড়ছে ফানুস। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
শৈশবের স্মৃতি আঁকড়ে আকাশে উড়ছে ফানুস। নেই শব্দ দানবের তাণ্ডব। সন্ধ্যে নামতেই ঘন অন্ধকারের বুক চিরে রাতের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে লালচে আলো। সে দিকে তাকিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়ছেন অনেকেই। স্মৃতি মন্থন করছেন শৈশবের।
কালীপুজোয় প্রতি বছরের চিরাচরিত সেই দৃশ্য দেখা গেল না। এ বছর কৃষ্ণনগর ও বহরমপুরে কোন যাদুবলে যেন শব্দ দানবের উৎপাত খতম। তার দখল নিল নানা রঙের ফানুস।
দোকানিরা বলছেন, ‘‘অন্য বারের থেকে এ বার শব্দবাজি বিক্রিতে প্রশাসন অনেক কড়াকড়ি করেছে। চলেছে ধড়পাকড়। ফলে ব্যবসায়ীরা শব্দবাজি বিক্রির ঝুঁকি নিতে চাননি। পাশাপাশি পুরবাসীরাও এ বার শব্দবাজি কিনতে সে ভাবে আগ্রহী দেখাননি। পরিবর্তে তাঁরা কিনেছেন সস্তার ফানুস।’’ কৃষ্ণনগরের স্কুল শিক্ষক অরূপ সরকার বলেন, “আসলে আমরা শৈশবে দেখেছি বড়রা কী ভাবে ফানুস ওড়াতেন। সেই ফানুস যখন নামমাত্র টাকায় মিলছে, তখন কিন্তু একটা নস্টালজিক অনুভূতি কাজ করেছে।”
এ বছর প্রথম থেকেই শব্দবাজির ব্যাপারে ‘সিরিয়াস’ পুলিশ। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার শক্তিনগর থেকে বাজি বিক্রির অভিযোগে দু’জনকে ধরেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি। শহরের বাসিন্দা চিকিৎসক মহিতোষ বিশ্বাস বলেন, “পুজোর রাতে বাজির শব্দ পাইনি। এটা সমাজের পক্ষে স্বাস্থ্যকর।”
তবে, শুধু শব্দবাজি রুখতেই যে নদিয়া পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করছে, তা নয়। সম্প্রতি পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার সতর্ক করে দিয়েছেলেন, মদ্যপ অবস্থায় গন্ডগোল করে কেউ পার পাবে না। পুজোর রাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মদ্যপ অবস্থায় ঝামেলা পাকানোর অভিযোগে ৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে পুলিশর দাবি, এটা আসলে নেট প্রাকটিস। এটা থেকেই প্রশাসন শহরবাসীকে একটাই বার্তা দিতে চাইছে, জগদ্ধাত্রী পুজোয় আরও কড়া হাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে।
একই ভাবে চিনের তৈরি ফানুস মন জয় করেছে বহরমপুরের মানুষেরও। আট থেকে আশি—সকলেই মেতে উঠেছেন ফানুস ওড়ানোতে। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির কর্মী জয়জিৎ সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, চিনের তৈরি ওই ফানুসের নাম ‘স্কাই ল্যান্টার্ন্স’ অর্থাৎ রাতের লণ্ঠন। আকার ও গুণগত মানের তারতম্যের ভিত্তিতে ৪০-১৩০ টাকায় বিকিয়েছে ফানুস।
বহরমপুরের বিভিন্ন খোলা বাজারে বাজি-পটকার দোকানেই বিক্রি হচ্ছে ফানুস। এমনই এক ফানুস বিক্রেতা জানান, গত বছরও বহরমপুরে ফানুস বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এত অল্প পরিমাণে এসেছিল যে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। ফানুস কিনতে না পেরে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরেছিলেন। তখনই বুঝেছিলেন ফানুসের চাহিদা রয়েছে। এ বছর চাহিদা মেনে বেশি পরিমাণে ফানুস আমদানি করেছিলেন।
আর সে সব ফানুস দিব্যি সব বিকিয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় বহরমপুর গির্জার মোড়ে, ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে লোকজন সোৎসাহে ফানুস উড়িয়েছে।
আশঙ্কা ছিল, পুজোর রাতে শব্দবাজিতে অতিষ্ট হয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকবে পোষ্যরা, নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরতে না পেরে রাতের আকাশে উড়ে বেড়াবে পাখিরা, বুকে পেশমেকার নিয়ে ঘরের দরজা-জানালায় খিল তুলে দিয়ে বসে থাকতে হবে অসুস্থ ও প্রবীণ মানুষদের!
কিন্তু সবই মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। পুজোর আগে থেকেই প্রশাসন বাজির বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিল। তার ফলও মিলেছে। ফলে আশঙ্কা থেকে গিয়েছে আশঙ্কাতেই। আর এতে সকলেই খুশি।