দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই নিশ্চয় যান।
নিশ্চয় যান উল্টে আসন্নপ্রসবার গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চালকের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপই করা হল না। কারণ হিসাবে পুলিশ জানিয়েছে, প্রসূতির পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
গত শনিবার রাতে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রাখী বাগ নামে এক প্রসূতিকে নিয়ে আসার সময় ধুবুলিয়ার বাহাদুরপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে নয়নজুলিতে উল্টে যায় একটি নিশ্চয় যান। রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মৃত সন্তানের জন্ম দেন রাখী। তাঁর বাড়ির লোক মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছিলেন, নিশ্চয় যানের চালক মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন চালক লাল্টু হালদার। তাঁর দাবি, গভীর রাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে তাঁর চোখে ঘুম জড়িয়ে এসেছিল। রাস্তায় কুয়াশা ছিল। দুইয়ের জেরে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রসূতির পরিবার তা মানতে চায়নি। তারা জানিয়েছে, ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তাদের বাড়ির চার জন। রাখী আপাতত কলকাতার নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। তাঁদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তারা পুলিশ বা স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেনি।
তবে স্বাস্থ্য দফতর আলাদা করে একটি তদন্ত শুরু করেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে চালককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “খোঁজ খবর করছি। ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা পরিষ্কার হওয়ার পরই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।”
তবে এই দুর্ঘটনার পরে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা উঠছে তা হল, নিশ্চয় যানের চালকদের কি কোনও নির্দিষ্ট কাজের সময় বা শিফট নেই? তাঁদের কি অনেক সময় টানা ২৪ ঘন্টা না ঘুমিয়ে ডিউটি করতে হবে?
ওয়েস্টবেঙ্গল অ্যাম্বুল্যান্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনস-এর নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি জয়দেব ঘোষ জানিয়েছেন, জেলায় ১৪৭টির মতো নিশ্চয় যান চলে। প্রত্যেকটির এক জন চালক। প্রয়োজনে কাউকে ২৪ ঘন্টা করে ডিউটি করতেই হয়। তাঁর কথায়, “প্রথমে তিন জন করে চালক ছিলেন। কিন্তু প্রতি কিলোমিটারে মাত্র আট টাকা দিচ্ছে সরকার। এত কম টাকায় একাধিক চালক রাখা সম্ভব না। তার উপরে প্রায় ১০ মাস টাকা পাচ্ছি না।”
তবে স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, একটি হাসপাতালে চুক্তির ভিত্তিতে অনেক নিশ্চয়যান চলে। ফলে কোনও একটি গাড়ি বা চালকের উপরে খুব বেশি চাপ পড়ার কথা নয়। যেমন, বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের সঙ্গে ১১টি নিশ্চয় যান চুক্তিবদ্ধ। ফলে সকলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ডিউটি করেন। স্বাস্থ্যকর্তারা চালকের ঘুমিয়ে পড়াকেই মূলত দায়ী করছেন এবং সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত গলদ। সোমবারও লাল্টু দাবি করেছেন, “এমনিতেই ঘন কুয়াশা ছিল। তার উপরে ভাল করে ঘুম হয়নি বলে চোখ বুজে এসেছিল। যখন চোখ খুললাম, দূরের কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। আচমকা সামনে ডিভাইডার চলে আসায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।”