ডোমকলে পুর ভোটের আতঙ্কের আবহে, বৃহস্পতিবার আচমকাই খুন হয়েছিলেন জেলা তৃণমূল ছাত্র নেতা আসাদুল শেখ।
সেই সুতোয় ইতিমধ্যেই জড়িয়ে গিয়েছেন মর্শিদাবাদের জেলা সভাধিপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার-সহ তিন জন। শুক্রবার, কলকাতা বিমানবন্দর এলাকা থেকে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও এক যুবককে। সন্তু সিংহ নামে ওই যুবক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সংস্থার কর্তা হিসেবে পরিচিত। শনিবার, তাঁকে বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে, ভারপ্রাপ্ত বিচারক বিজয়েতা দে তাঁকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৬ মে, ধৃত চার জনকে ফের আদালতে হাজির করানো হবে।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, ধৃতদের জেরা করে খুনের কারণ ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে। তবে তাঁর কথায়, ‘‘তদন্তের স্বার্থে অবশ্য এর বেশি এখন কিছুই বলব না।’’ বহরমপুর থানার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে ওই খুনের মামলার তদন্ত করছে জেলা পুলিশের ‘স্পেশাল অপারেশন স্কোয়াড’ (এসওএস)। বৃহস্পতিবার রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন আসাদুল। তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বহরমপুর (পূর্ব) ব্লকের সভাপতি ছিলেন। এ দিন আসাদুলের পরিবারকে তলব করা হয়েছিল থানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সন্দেহের তালিকায় তাঁরা আর কাকে রাখতে চাইছেন। পুলিশ জানায়, তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, ওই দিন, তিনটি মোটরবাইকে ছ’জন দুষ্কৃতী চড়াও হয়েছিল আসাদুলের উপরে। ‘অপারেশন’ সেরে তারা ভাকুড়ি মোড় থেকে হরিহরপাড়া যাওয়ার রাস্তা দিয়ে দ্রুত হারিয়ে যায়। তিনটি মোটরবাইকে কোনও নম্বর প্লেট ছিল না। দু’টি মোটরবাইকে আরোহীদের মাথায় হেলমেট ছিল বলেও জানা গিয়েছে। বাকিদেরদের মুখ রঙিন কাপড়ের ফেট্টি দিয়ে বাঁধা ছিল।
এ দিন স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দাকেও জেরা করে পুলিশ। আসাদুল যেখানে খুন হন, সেই বকুলতলার কাছে তেলের ঘানির দোকাল মালিক ও চায়ের দোকান মালিককেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কথায়, তেলের ঘানি ও তার সামনে চায়ের দোকান রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ওই দিন কি এমন ঘটল যে, সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। এমনকী দোকানের বাইরে যে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল, ঘটনার পরে তাও খুলে রেখে দেয় ঘানি মালিক। বহরমপুর পুরসভায় যে দিন গণ্ডগোল হয়, সেই সন্ধ্যায় কংগ্রেস কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনায় আসাদুল ও তার দলবল জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানতে পেরে ভাকুড়ির এক কংগ্রেস নেতাও আসাদুলকে বেশ কয়েক বার ফোনে হুমকি দিয়েছিল বলে আসাদুলের দুই স্ত্রী ও মা পুলিশকে জানিয়েছেন।
তবে, কংগ্রেসের অভিযোগ, নিতান্ত ব্যবসায়ীক কারনে আসাদুল খুন হলেও ‘শাসক-ঘনিষ্ঠ’ পুলিশ অধীর চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য অভিযুক্তদের নামের তালিকায় তাঁর ঘনিষ্ঠদের নাম রাখছে।