বইমেলার উদ্বোধনে নেই মাস্ক, দূরত্ববিধি। নিজস্ব চিত্র
করোনা সতর্কবিধির মধ্যেই ঢাক বাজিয়ে বিরাট শোভাযাত্রা সহ সোমবার থেকে শুরু হল লালগোলায় ৮ম বইমেলা। মুর্শিদাবাদের জেলা পুলিশের পদস্থ পুলিশ কর্তাদের অনুপ্রেরণায় শুরু হওয়া এই বইমেলায় ২০০ জনের বেশি জমায়েত করা হবে না এই আশ্বাস যে নেহাতই ফাঁকা আওয়াজ তা প্রথম দিনই সামনে এসেছে।
বিধি নিষেধ সত্ত্বেও কমতি নেই শাসক দলের বস্ত্র দানের সমাবেশ সহ একাধিক অনুষ্ঠানেরও। অথচ গত দু দিনে জেলায় করোনা বেড়েছে অন্তত ১০ গুন বেশি। শনিবার ছিল ৩৮। রবিবার তা দাঁড়িয়েছে ৪৮। ফরাক্কায় করোনা ধরা পড়েছে ৪ জনের, যাঁরা সকলেই ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক।
করোনার সেই ভয়ে দুয়ারে সরকার বন্ধ হলেও রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে জাঁকিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে সর্বত্র দু’দিন আগেই। মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে তাই আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ নিয়ে। ভিন রাজ্যে ওমিক্রনের দাপট বাড়ায় ইতিমধ্যেই জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরাও। এরমধ্যেই জেলার সর্বত্রই বইমেলা করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। বহরমপুরে জেলা বই মেলা হয়েছে দাপিয়ে। লালগোলায় বই মেলা চলবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। সাগরদিঘিতে বইমেলা ২৩ থেকে ৩০ জানুয়ারি। জেলার প্রতিটি থানাতেই বই মেলা হওয়ার কথা। রঘুনাথগঞ্জে বইমেলা ২৫ জানুয়ারি থেকে।
ফরাক্কায় শাসক দলের আয়োজনে ফরাক্কা উৎসব শেষ হয়েছে লাগাম ছাড়া ভিড় নিয়ে এই এলাকায় ওমিক্রন ধরা পড়ার পরেও। অন্যদিকে টিকাকরণেও অনেক পিছিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা। ৮০ লক্ষ বাসিন্দার মুর্শিদাবাদ জেলায় এ পর্যন্ত ২৪.১০ লক্ষ মানুষকে টিকার দুটি ডোজ় দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যা মাত্র ৩০ শতাংশ। ৪৭.৯৯ লক্ষ নিয়েছে শুধুমাত্র প্রথম ডোজ়। অর্থাৎ ৫৯.৬ শতাংশ। বহু এলাকাতেই টিকা নেওয়ার ব্যাপারে অনীহার ঘটনাও সামনে এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের। ইতিমধ্যেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক হাসপাতালে।
জেলার যা পরিস্থিতি তাতে যে কোনও মুহূর্তে এ জেলাতেও প্রকোপ বৃদ্ধির ঘটনা উড়িয়ে দিচ্ছে না চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-ও।
এক দিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে জেলা জুড়ে মেলা, খেলার তীব্র সমালোচনা করেছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে দরকার কোভিডের উন্নত মানের চিকিৎসা। দু’দু’টো ২৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল গড়ার অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় সরকার বহরমপুর ও নদিয়ার কল্যাণীতে। কিন্তু রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় তা সময় মত গড়া গেল না। এই মুহূর্তে এটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। তাই রাজ্য সরকারের উচিত এ জেলার মানুষকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে সেই হাসপাতাল গড়তে দ্রুত সহযোগিতার হাত বাড়ানো।”
কেন এই হাসপাতাল হল না, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলা প্রশাসনের কেউ। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, কোভিডে এ জেলায় পরিকাঠামো বা শয্যার অভাব নেই। অভাব ম্যান পাওয়ারের। চিকিৎসক ও নার্স নেই। তাই নতুন করে হাসপাতাল গড়ে কোনও লাভ নেই।