শীত আর বর্ষা— গরু পাচারকারীরা সাধারণত এই দুই ঋতুর জন্যই অপেক্ষা করে বছরভর। শীত পড়তেই তাই ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা। মুর্শিদাবাদের সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার যে পুরোপুরি এখনও বন্ধ হয়নি গত তিন সপ্তাহে জেলার দু’-দুটি সীমান্ত সড়কে বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে গরু পাচারকারীদের সংঘর্ষ ও বিএসএফ জওয়ানদের গুলি চালনার ঘটনাই তার বড় প্রমাণ।
চারদিকে যখন নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সামলাতে ব্যস্ত পুলিশ, ঠিক তখনই সুতির পথ ধরে গরু পাচারকারীদের সঙ্গে রীতিমতো সংঘর্ষ হয়েছে বিএসএফ জওয়ানদের। শনিবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনায় আত্মরক্ষার্থে গুলিও চালাতে হয়েছে বিএসএফ জওয়ানদের। সুতির বাজিতপুরে বর্ডার আউট পোস্টের কাছে বিএসএফ জওয়ানদের লক্ষ্য করে প্রথমে ইট ও পাথর ছোড়ে পাচারকারীরা। পরে লাঠি, শাবল নিয়ে ঘিরে ধরে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। জওয়ানদের রাইফেলও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলে দাবি বিএসএফের। বিএসএফ তখন পাল্টা গুলি চালায় পাচারকারীদের লক্ষ্য করে।
একই ভাবে গত ১ ডিসেম্বর বাজিতপুরের মতোই বাউসমারি সীমান্তের আউট পোস্টের কাছে সন্ধ্যে থেকেই একদল পাচারকারী গরু পাচারের চেষ্টা শুরু করে। জওয়ানেরা তাদের দেখতে পেয়ে রুখে দাঁড়ালে দুষ্কৃতীরা পাথর ছুড়তে শুরু করে। বিএসএফ সে বারেও গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তাতে কিছু পাচারকারী অন্ধকার ও কুয়াশার সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গেলেও ছ’জনকে আটক করে বিএসএফ। তাদের বাড়ি রানিনগর, বৈষ্ণবনগর ও দৌলতাবাদ এলাকায়। সে বারে ১৩টি গরু বাজেয়াপ্ত করে বিএসএফ। পরে ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে আটক করা হয় আরও ২৪টি গরু।
বিএসএফের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, শীতে খুব তাড়াতাড়ি অন্ধকার নামে। কুয়াশায় ঢেকে যায় চারপাশ। রাস্তাঘাটে লোক চলাচল কমে যায়। তারই সুযোগ নেয় পাচারকারীরা। তাই পাচার নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের মধ্যেও।
বিএসএফের দাবি, দলবদ্ধ ভাবে গরু পাচার কমলেও পাচার একেবারে বন্ধ হয়নি। গত ৬ মাসে অন্তত ৫ জনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে সীমান্তের চর থেকে। তাদের কারও বাড়ি বীরভূম, কারুর বাড়ি রানিনগর কিংবা বৈষ্ণবনগরে। বিএসএফের দাবি, গুলি কে চালিয়েছে তার থেকেও বড় কথা ওই রাতে সীমান্তের চরে গরু পাচারকারী ছাড়া তো আর কারও থাকার কথা নয়।