—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোজাগরীর রাতে প্রথা মেনেই সূচনা হয়ে গেল নবদ্বীপের অন্যতম প্রধান উৎসব রাসের। যদিও দুর্গাপুজোর মতো কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর তিথি-নক্ষত্র নিয়েও এবার বিভ্রান্তি রয়েছে।
অনেকের মতে, যেহেতু বুধবার সূর্যোদয়ের অনেক পরে পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে এবং বৃহস্পতিবারের সূর্যোদয় হচ্ছে পূর্ণিমার মধ্যে। তাই বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীপুজো করা বিধেয়। আর একপক্ষের মত, কোজাগরী লক্ষ্মী যেহেতু নিশীথে পুজো করাই নিয়ম। তাই বুধবার রাতেই পুজো করা বিধেয়। তবে এসব বিতর্কে না গিয়ে নবদ্বীপের রাসের অধিকাংশ উদ্যোক্তাই বুধবারের সন্ধ্যাকে বেছে নিয়েছিলেন রাসের প্রস্তুতি হিসাবে পাট পুজোর জন্য।
কোজাগরীর রাত চিরকালই নবদ্বীপের ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যঞ্জনা বহন করে। নবদ্বীপে এ রাত অধিবাসের, উৎসবের নান্দীমুখের। এখানকার অন্যতম প্রধান উৎসব রাসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় কোজাগরীর রাতে। কয়েকশো বড় বড় প্রতিমার কাঠামো ধুয়ে মুছে তাতে নারায়ণ শিলা ছুঁইয়ে পুজো করা হয়। আলোক মালায় সাজানো হয় পুজোর বেদী। স্থানীয় ভাবে এরই নাম ‘পাট পুজো’। যা আসলে দেবীর আবাহন। সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে তার জন্য স্বস্তিবাচক পুজো। এখন থেকে পরবর্তী এক মাস ধরে ওই পাটের উপরেই তৈরি হবে সুউচ্চ সব প্রতিমা। এক মাস পরের পূর্ণিমায় পালিত হবে রাস উৎসব। নবদ্বীপের স্থানীয় অর্থনীতিতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ।
তাই কোজাগরীর রাতে থেকেই শুরু হয়ে যায় রাসের কাউন্টডাউন। বাজি ফাটিয়ে, বাজনা বাজিয়ে তুমুল উদযাপন চলে শহর জুড়ে। যদিও এই রাতে শব্দহীন থাকাই শাস্ত্রের বিধান। অন্যান্য বাজনা-বাদ্যি দূরে থাক, কোজাগরীর রাতে ঘণ্টা বাজানো পর্যন্ত নিষিদ্ধ। যদিও এখন আর তা হয় না। শহরজুড়ে কয়েকশো রাস বারোয়ারির পাট পুজো উপলক্ষে শব্দবাজির দাপটে আতঙ্কে থাকতেন শহরবাসী। এমনকী বাজি ফাটানোর কারণে বহু দুর্ঘটনার সাক্ষীও থেকেছেন এই শহরের বাসিন্দারা।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা বদলে গিয়েছে সেই ছবি। সাম্প্রতিক সময়ে শব্দবাজি নিয়ে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ করায় শব্দের সেই দাপট এখন অনেকটাই স্তিমিত। আর সেই পথ ধরেই বুধবার দিনভর নবদ্বীপ থানার তরফে মাইক প্রচার চালানো হয়, যাতে কোনও বারোয়ারি পাটপুজো উপলক্ষে শব্দবাজি না ফাটানো হয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে সন্ধ্যা থেকে রাস্তায় থাকবে টহলদারি। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে স্থানীয় দোকানদারদেরও সতর্ক করা হয়েছে।