মিজোরামের কিশোর ফুটবলাররা। —নিজস্ব চিত্র।
এক দল লোক গলা ফাটাচ্ছে ‘মিজোরাম-মিজোরাম’, অন্য দল তারস্বরে চিৎকার করছে ‘মণিপুর-মণিপুর’। ঘটনাস্থল মুর্শিদাবাদের বহরমপুর স্টেডিয়াম। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার দূরের একটি রাজ্যের সাব-জুনিয়র দলের জন্য স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক গলা ফাটাচ্ছে, এ দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। তা দেখাল নবাব সিরাজউদ্দৌলার শহর। সাব-জুনিয়র ন্যাশনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই পড়শি রাজ্য মিজোরাম এবং মণিপুর। টানটান সেই খেলায় মুছে গেল সীমানার ভেদাভেদ। দর্শকেরা ভাগ হয়ে গেল মিজোরাম এবং মণিপুরের সমর্থক হিসাবে। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় মিজোরাম। তবে দর্শক থেকে আয়োজক প্রত্যেকের হৃদয় জিতে নিয়েছেন মণিপুরের ফুটবল যোদ্ধারা।
৩ সেপ্টেম্বর থেকে মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ জেলায় শুরু হয়েছিল সাব-জুনিয়র ন্যাশনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। মোট ১৬টি দল অংশ নেয় এই টুর্নামেন্টে। ‘এ’, ‘বি’ ,‘সি’ এবং ‘ডি’— এই চারটে গ্রুপে ভাগ করে খেলা হয়। ‘এ’ এবং ‘সি’ গ্রুপের খেলা হয় মালদাহে ‘বি’ এবং ‘ডি’ গ্রুপের খেলা হয় বহরমপুরে। মালদহ থেকে মিজোরাম এবং বহরমপুর থেকে মণিপুরের ফুটবল দল গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। অশান্তির আগুনে দগ্ধ জন্মভূমি থেকে খেলতে আসা মণিপুরি কিশোরদের সমর্থক একটু বেশিই ছিল। মিজোরামের পক্ষেও দর্শক কম ছিল না। বল দখলের লড়াইয়ে প্রথমার্ধে মণিপুর এগিয়ে ছিল। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে ৩-০ গোলে মণিপুরকে হারিয়ে কাপ ছিনিয়ে নেয় মিজোরাম।
খেলা শেষে মণিপুর দলের ম্যানেজার মুতুম তম্বিমাচা বলেন, ‘‘প্রতি দিন ফোন আসছে, নতুন করে গ্রাম জ্বলছে। নতুন-নতুন এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছে। কাপ জয়ের থেকেও অশান্ত রাজ্যে যে বার্তা ছেলেরা নিয়ে যাচ্ছে, আগামিদিনে সেটাই দৃষ্টান্ত হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অশান্ত পরিস্থিতির জন্য ট্রেনিং বন্ধ ছিল। ফুটবল মাঠেই আসতে ভয় পাচ্ছিল খুদেরা।’’ আর পুরো টুর্নামেন্টে ১৫টি গোল করে মহম্মদ ওয়াজিদের কথায়, ‘‘আমরা নতুন স্বপ্ন নিয়ে ঘরে ফিরছি।’’
টানটান লড়াই দেখে দর্শকেরা মুগ্ধ। তাঁদের কথায়, ‘‘খেলার ফলে চাম্পিয়ন মিজোরাম। তবে লড়াই বলছে জয়ী মণিপুর।’’ টুর্নামেন্টের আয়োজকদের তরফে মুর্শিদাবাদ জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যের খেলোয়াড়দের জন্য এত দর্শক এসে এখানে গলা ফাটাচ্ছেন, জীবনে এই দৃশ্য দেখিনি। মণিপুরের খুদেরা আজ ফুটবলের মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস লিখল। আর এমন একটি জয়ের জন্য মিজোরামকে অনেক শুভেচ্ছা।’’