যেন বানভাসি। কল্যাণীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র
শহরের প্রধান এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার ব্যবস্থা রয়েছে বহু আগেই। প্রায় একশো কোটি টাকা খরচ করে ওই নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করেছে কল্যাণী পুরসভা। কিন্তু সে সব সিংহ ভাগ কাজ হয়েছে এগিয়ে থাকা ওয়ার্ডগুলিতে। পুরবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, আসলে এটাই যেন কল্যাণী পুরসভার চরিত্র হয়ে গিয়েছে। শহরের এ এবং বি এই দুই ব্লকের ‘অভিজাত’ ওয়ার্ডগুলিতে গেলে যেন মনে হবে এখানে কোনও সমস্যাই নেই। কিন্তু কলোনি ওয়ার্ডগুলির নিকাশি ব্যবস্থা এখনও যেন সেই মান্ধাতার আমলের।
পুরসভার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ থেকে ৭ নম্বর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘পিছিয়ে পড়া’ বলে ধরা হয়। তাই আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা গড়ার ব্যাপারে গা করেনি পুরসভা। তা যদি হত, তা হলে ওই ওয়ার্ডগুলির অনেক এলাকার বাড়ি বা আবাসনের শৌচাগার-সহ রান্নাঘরের নোংরা জল সরাসরি রাস্তার নীচে থাকা চেম্বারে যেত। সেই নোংরা জল চলে যেত ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। তা না হওয়ায় একই শহরে নিকাশির বৈপরীত্য স্পষ্ট চোখে ধরা পড়ে।
শহরের হাউজিং রেলগেট পেরিয়ে বিধানপল্লি এলাকায় গেলে দেখা যায়, সেখানে এখনও আধুনিক নিকাশি ব্যবস্থা নেই। অপ্রশস্ত রাস্তার দু’পাশে রয়েছে সারি সারি বাড়ি। আর রাস্তার পাশেই রয়েছে খোলা নালা। সেই নালাও আবার নিয়মিত পরিষ্কার হয় না বলে এলাকার লোকজনের একাংশের অভিযোগ। তাঁরা জানান, উন্নত নিকাশি না থাকার কারণে বর্ষায় ওই নর্মদার জল উপচে পড়ে। তখন এলাকার লোকজনের সমস্যার অন্ত থাকে না।
ঘোষপাড়া স্টেশন সংলগ্ন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আইটিআই কলোনি থেকে রেল লাইন বরাবর এলাকাগুলির বেশিরভাগ অংশেও কোনও উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। এলাকার টোটোচালক বিশ্বনাথ দাস বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকায় উন্নয়নের ব্যাপারে পুরসভার কোনও নজরই নেই। টোটো নিয়ে গোটা শহরে যেতে হয়। সব এলাকায় যেমন উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে সে সবের কোনও কিছুই আমাদের এলাকায় নেই। এলাকার অনেক জায়গায় খোলা নালা এমন অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে যার ফলে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে যায়।’’
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিলপাড়ের বাসিন্দাদের একাংশেরও অভিযোগ, সেখানেও গড়ে ওটেনি উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে রবীন্দ্রনাথ কলোনি-সহ কয়েকটি কলোনি রয়েছে। এ ছাড়াও ওই ওয়ার্ডে কয়েক বছর আগে বহু লোককে ঘর বানানোর জন্য জায়গা দিয়ে নতুন কলোনি তৈরি করা হয়েছে। ওই এলাকার লোকজনের একাংশের অভিযোগ, উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি।
শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডেক বাসিন্দা তথা শহর যুব তৃণমূলের নেতা কৃষ্ণ মাহাতো বলছেন, ‘‘সীমান্ত স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে পাহাড়িপাড়া, ভুট্টাবাজার ও কোঙ্গারনগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশিনালা নেই। খোলা নর্দমা থাকায় মশার উৎপাত।’’
এ ব্যাপারে কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীলকুমার তালুকদার জানান, কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির টাকায় প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা হয়েছে। এখনও দ্বিতীয় পর্যায়ে অনেক জায়গায় ওই কাজ হচ্ছে।