প্রতীকী ছবি
খাতায়-কলমে ’কনটেনমেন্ট জ়োন’ হলেও আদতে কিছুই প্রায় মানা হচ্ছে না কালীগঞ্জের মোলান্দিতে। এমনকী বাঁশের ঘের দিয়ে এলাকায় ঢোকা-বেরনোর রাস্তাও আটকানো হয়নি।
গত ২২ জুন কালীগঞ্জ বাজার এলাকার এক ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পরেই ওই এলাকা ’কনটেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল প্রশাসন। পরের দিনই দেবগ্রামের নেতাজিনগর পাড়ায় এবং বড় চাঁদঘরের মোলান্দি গ্রামে সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রশাসনের তরফে ওই দুই এলাকাকে ’কনটেনমেন্ট জ়োন’ বলে ঘোষনা করেছে।
সরকারি নিয়ম অনুসারে এখন আগের চেয়ে অনেক ছোট করে দেওয়া হয়েছে ’কনটেনমেন্ট জ়োন’। কিন্তু ওই এলাকা থেকে কেউ বেরোতে পারবে না, সেখানে কেউ ঢুকতেও পারবে না। নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে প্রশাসনের তরফে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়া হবে।
কিন্তু এই সব নিয়মের কোনও তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার লোকজন অবাধেই ঘোরাঘুরি করছে। কালীগঞ্জ বাজার এলাকাকে ’কনটেনমেন্ট জ়োন’ ঘোষণা করার পরে সেখানে বাঁশের ঘেরাটোপ লাগানো হয়েছে। তার পরেও ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা কালীগঞ্জ বাজারে দোকান খুলে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ। অনেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বেরিয়েও পড়ছেন।
বুধবার কালীগঞ্জের ওই এলাকার বাসিন্দা গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “বুধবার দেখলাম, আমাদের এলাকা স্যানিটাইজ় করা হল। তবে প্রশাসনের তরফে আমাদের কোনও ফোন নম্বর দেওয়া হয়নি যেখানে যোগাযোগ করে জরুরি ওষুধ, জল বা খাবার চাওয়া যেতে পারে। প্রশাসনের তরফে কেউ যোগাযোগও করেননি। প্রয়োজন হলে আমাদের তো বাইরে যেতেই হবে, না হলে খাব কী?”
একই অভিযোগ মিলেছে ’কনটেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত দেবগ্রাম এলাকা থেকেও। যদিও ওই এলাকার এক পঞ্চায়েত সদস্য সুখেন দাসের দাবি, “কেউ আমার সঙ্গে যোগায়োগ করলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিস পৌছে দেব।“
বড়চাঁদঘর এলাকার মোলান্দি গ্রামে তো এলাকা চিহ্নিত করে বাঁশের ঘেরাটোপও দেওযা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, করোনা ধরা পরার পরে পঞ্চায়েতের তরফে বলা হয়েছিল সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার কোনও কিছুই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা জ্যোতিপ্রসাদ দাস বলেন, ’ন্যূনতম ব্যবস্থা যেখানে নেওয়া হয়নি, সেখানে অন্য ব্যবস্থার প্রশ্নও ওঠে না।“
কালীগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য আধিকারিক তিমিরকান্তি ভদ্র বলেন, “তিন দিন অন্তর এএনএম এবং আশাকর্মীরা এলাকায় গিয়ে জ্বর মাপবেন এবং আমাদের জানাবেন। আমরা সেই মতো ব্যবস্থা নেব। বাকিটা দেখার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের।“ তবে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের দাবি, এই সব ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিভিক ভলান্টিয়ারেরা এলাকায় নজর রাখছেন।
কালীগঞ্জের বিডিও নাজির হোসেনের দাবি, “এলাকায় নজরদারি চালানো এবং খাবার বা ওষুধ বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য কয়েক জন ভলাণ্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরাই সব ব্যবস্থা করছেন।“ সেই ভলান্টিয়ারেরা কোথায়? ঘেরাটোপে থাকা মানুষজন খাবার, জল বা ওষুধ না পেয়ে ঘর থেকে বেরোতে বাধ্য হচ্ছেন কেন? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি। প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে রাতে একাধিক বার তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।