প্রতীকী ছবি।
করোনা টিকার প্রথম ডোজ় নেওয়ার ক্ষেত্রে লোকে যতটা উৎসাহ দেখিয়েছিল, এখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ় নেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। অনেকে প্রথম ডোজ় নিলেও সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও দ্বিতীয় ডোজ় নিতে চাইছেন না। আবার কেউ কেউ দ্বিতীয় ডোজ় নিলেও তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ় নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ়ের বিষয়টি নিয়ে ক্রমে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, করোনা চলে গিয়েছে এমনটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। চিন, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে যে ভাবে নতুন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আগামী দিনে এ দেশেও ফের করোনার দাপাদাপি দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফলে যাঁরা করোনা চলে গিয়েছে ভেবে টিকা নিতে গড়িমসি করা মারাত্মক ভুল।
টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য অনেক জেলার থেকে নদিয়া অনেকটা এগিয়ে বলে কর্তাদের দাবি। একেবারে প্রথম দিকে টিকা নেওায়ার জন্য বিস্তর গন্ডগোলহয়েছে। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে মারপিট থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের আটকে রাখা, কিছুই বাদ যায়নি। টিকা নেওয়ার জন্য মাঝরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ বয়ে পড়াও আকছার ঘটেছে। কোথাও কোথাও হাসপাতাল কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। উঠেছে টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার অভিযোগও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সে সব স্তিমিত হয়ে এসেছে। ক্রমশ ভিড় কমতে শুরু করেছে টিকা কেন্দ্রগুলিতে। বর্তমানে বেশির ভাগ টিকাকেন্দ্র কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে।
কর্তাদের ব্যাখ্যা: এক দিকে প্রথম ডোজ় না নেওয়ার সংখ্যা যত কমেছে ভিড় কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ভয়ের কথা হল, করোনা সংক্রমণ কমায় সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার উৎসাহ কমে গিয়েছে। বর্তমানে নতুন রোগীর সন্ধান মিলছে না জেলায়। ফলে অনেকে ধরেই নিয়েছেন যে করোনা দেশ ছেড়েছে।
এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “এঁরা বুঝছেন না, যে কোনও নতুনি ভ্যারিয়েন্ট ফিরে আসতে পারে। সেই কারণেই তো ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের দ্রুত টিকা দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, নদিয়ায় ১২ বছরের বেশি বয়সি উপভোক্তার লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৪১ লক্ষ। তার মধ্যে প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়ে গিয়েছে প্রায় ৯৪.৫ শতাংশকে। বাকি ৫.৫ সংখ্যার প্রায় সবটাই ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সিরা। অর্থাৎ বাকি প্রায় সকলেরই প্রথম ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যত জন প্রথম ডোজ় নিয়েছেন তার মধ্যে ছয় লাখের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ় নেননি। আবার যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন তাঁদের অনেকে তৃতীয় ডোজ় নেননি।
স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, কেউ কেউ মনে করছেন যে টিকা নেওয়ার পরেও তো করোনা হচ্ছে। তা হলে নিয়ে কী লাভ? তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে টিকা নেওয়ার পর করোনা হতে পারে কিন্তু তার ধাক্কা অনেকটাই কম হবে। কর্তাদের কথায়, “এই প্রবণতাটাই বিপজ্জনক। যেমন করেই হোক আমাদের সবাইকে টিকার সব ডোজ় নিতে উৎসাহিত করতে হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, তার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। আবার তৃণমূল স্তরে শিবির করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ় দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। খুব শীঘ্রই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে চলেছে বলে জেলার কর্তারা জানিয়েছেন।