বাইরনের দলবদলে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ অধীর চৌধুরীর। — ফাইল ছবি।
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বাইরনের ‘মেন্টর’ অধীর চৌধুরী। তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলে অধীর জানালেন, দল ভাঙানোর যে খেলা শুরু হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৃণমূলই। পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর চ্যালেঞ্জ, এক মাঘে শীত যায় না!
গত বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়ে যাওয়ার পর বাম, কংগ্রেসকে আলো দেখিয়েছিল সাগরদিঘি। কিন্তু সেই আলো যে তিন মাসের মধ্যেই ‘আলেয়া’য় পরিণত হবে, ভাবতে পারেননি কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। বাইরনের দলত্যাগের খবর শোনার পর প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘মিরজাফরের থেকেও মানুষের সঙ্গে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বাইরন।’’ এর কিছু ক্ষণ পরেই প্রদেশ সভাপতি বাইরনকে ‘নন পলিটিক্যাল’ বলে আখ্যা দিয়ে তাঁর যাবতীয় আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের দিকে। তবে অভিষেক নন, অধীরের আক্রমণের নিশানায় ছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতাই। অধীর বলেন, ‘‘বাইরন সম্পর্কে আমার আগেও কোনও খারাপ ধারণা ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু, দিদি যে দল ভাঙানোর খেলায় সিদ্ধহস্ত, তা সারা ভারত জানে।’’ তার পরেই তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘দিদি, এক মাঘে শীত যায় না!’’ এর পর রাজনৈতিক ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা বলেন, ‘‘যে খেলা আপনি শুরু করেছেন, মিলিয়ে নেবেন, সেই খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনিই। আর কিছু দিনের মধ্যেই আপনার দল ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করলাম। কংগ্রেসকর্মীরা দুঃখ পাবেন না।’’
এই মুহূর্তে আগামী লোকসভা ভোটে দেশের সর্বত্র বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। তাতে এক দিকে যেমন আছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা, অন্য দিকে রয়েছে কংগ্রেস, বামও। আগামী ১২ জুন নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদবের বিহারে এই বিরোধী জোটের গুরুত্বপূর্ণ মহাবৈঠকও বসতে চলেছে। সেখানে মমতা থাকবেন, চেষ্টা হচ্ছে কংগ্রেসকেও আনার। হাত ছেড়ে বাইরনের তৃণমূলে যোগদানের কোনও প্রভাব কি পড়তে চলেছে সেই বৈঠকে? অধীরের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘সাগরদিঘির ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাজেয় নন। তৃণমূলকেও হারানো যায়।’’
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাগরদিঘিতে ভোট হয়। ২ মার্চ ফল বেরোলে দেখা যায় কুড়ি হাজারেরও বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন। বস্তুত, বাইরনের হাত ধরেই বিধানসভায় প্রবেশাধিকার পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু তাঁরই দলত্যাগে আবারও বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেল কংগ্রেস।