ছবি সংগৃহীত।
রাতে রুটি চেয়ে পাওয়া যায় না। হেপাটাইটিস বা ডায়বিটিসের রোগীদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা নেই। নিরামিষাশীদের জন্যও নেই কোনও বিকল্প প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার। যতটা ভাত দেওয়া হয়, তাতে পেট ভরে না কারও-কারও।
সব মিলিয়ে রোগীদের খাবার নিয়ে ক্ষোভ জমছিলই কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল কোভিড হাসপতালে। রবিবার রাতে খাওয়া বয়কট করেন অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, একাধিক ডায়বিটিস রোগী রুটি চেয়ে পাননি। পেটের রোগীকে মশলাদার তরকারি দেওয়া হয়েছিল। দুপুরের বাসি ডালই দেওয়া হয়েছিল রাতে, সামান্য টকে গিয়েছিল। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের প্রয়োজন মাফিক খাবার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলে সোমবার সকাল থেকে খাবার নিতে রাজি হন রোগীরা।
গ্লোকালে এমনিতে প্রতি দিন প্রাতরাশে পাউরুটি, ডিম, কলা আর লাড্ডু দেওয়া হয়। যাঁদের ডায়বিটিস আছে, তাঁদের জন্য লাড্ডুর পরিবর্তে একটি করে শসা। দুপুরে ভাত, ডাল, সব্জির সঙ্গে কোনও দিন মাছ, কোনও দিন মুরগির মাংস বা ডিম। শেষ পাতে টক দই। রাতেও প্রায় একই—ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মাছ, মুরগি বা ডিম দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হল, সকলের জন্যই একই খাবার। গত আট দিন ধরে গ্লোকালে ভর্তি থাকা এক রোগীর কথায়, “আমি হেপাটাইটিসের রোগী। ব্লাড সুগারও আছে। মশলাদার খাবার চলে না, দু’বেলা ভাতও খাওয়াও ঠিক নয়। আমি বারবার হালকা তেল-মশলা দেওয়া খাবার চেয়েছি, রাতে রুটি আর একটা পাতলা সব্জি। প্রয়োজনে সিদ্ধ সব্জিও দিতে পারে। কিন্তু কোনও দিনই দেয় না। আগে জিজ্ঞাসা করে গিয়েও রুটির জায়গায় ভাত দেয়। তাই রবিবার রাতে আমরা অনেকেই খাবার খাইনি।”
হইচইয়ের পরে সোমবার দুপুরে ওই রোগীর জন্য আসে ফেনাভাত, ঘি আর পেঁপে-আলু সিদ্ধ। ডায়াবিটিসের কারণে তিনি আলু খান না। শুধু পেঁপে সিদ্ধ দিয়ে ভাত খেয়েছেন। তবে আর এক সমস্যা নিরামিষ খেতে চাইলে। সদ্য বাবা মারা যাওয়ায় হাঁসখালির এক যুবক নিরামিষ খাবেন বলে জানিয়েছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, “দুপুরে ঝোল থেকে মাংসটা তুলে নিয়ে ডাল, সব্জি আর টকদই দিয়ে গেল!” নবদ্বীপ থেকে এসে ভর্তি হওয়া এক রোগীর অভিযোগ, “ভাতটা পরিমাণে কম দেয়। চেয়েও পাওয়া যায় না।”
নদিয়ার দুই কোভিড হাসপাতালে খাবার নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে কল্যাণীর এসএনআর কার্নিভালে খাবারের মান এবং জোগান নিয়ে ঘোরতর অভিযোগ উঠেছিল। কোভি়ড হাসপাতাল বা সেফ হোমে ভর্তি থাকা রোগীদের জন্য দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু যে পরিমাণে যে মানের খাবার দিতে পারা উচিত, তা আদৌ দেওয়া হচ্ছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কার্নিভালে তো এক সময়ে বড়জোর শ’খানেক টাকায় দিনের খাবারের খরচ সেরে ফেলার অভিযোগ উঠছিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে হইচই হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা শুধরোলেও সমস্যা যে রয়ে গিয়েছে, রবিবার রাতে গ্লোকাল হাসপাতালে রোগীদের খাবার বয়কটই তার প্রমাণ।
গ্লোকাল হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার অবশ্য সোমবার বলেন, “আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ীই নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাত দেওয়া হয়। কেউ-কেউ হয়তো একটু বেশি খান, তাঁদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।” যিনি যতটা খেয়ে এসেছেন, হাসপাতালে এসে তা পাবেন না? সুপারের আশ্বাস, “যিনি খাবার সরবরাহ করছেন, তাঁকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি যে যাঁর যেমন খাবার প্রয়োজন, তেমনটাই দিতে হবে। আশা করি আর সমস্যা থাকবে না।” কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মণীশ বর্মাও বলছেন, "বিষয়টা জানার পরেই আমি হস্তক্ষেপ করেছি। বলে দেওয়া হয়েছে, খাবার নিয়ে যেন কোনও সমস্যা না হয়।”
প্রশ্ন হল: কোভিড হাসপাতালেই যখন খাবার নিয়ে এ রকম অব্যবস্থার অভিযোগ উঠছে, তুলনায় কম গুরুত্বের সেফ হোমগুলির তা হলে কী অবস্থা?