বন্ধ কল্যাণী জিএনএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগ। মঙ্গলবার কল্যাণীতে। ছবি: সুদেব দাস।
বছর পাঁচেক আগে বাঁ কানে পর্দায় ছিদ্র দেখা দিয়েছিল। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন দত্তপুলিয়ার বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের ঋত্বিক সরকার। সব কিছু ঠিক থাকলেও ফের তাঁর কানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নাক-কান-গলা বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসেন ঋত্বিক। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিনও চিকিৎসক পড়ুয়াদের কর্মবিরতি, অবস্থান-বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। চিকিৎসা না-করিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে ঋত্বিককে।
মঙ্গলবার বারো দিনে পড়ল চিকিৎসক পড়ুয়াদের আন্দোলন। এর আগে এক টানা এত দিন জেএনএম হাসপাতালে বহির্বিভাগ কখনও বন্ধ থাকেনি। এখন প্রতিদিনই নদিয়া ও পার্শ্ববর্তী জেলার রোগীরা ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে এসে পরিষেবা না-পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বহির্বিভাগের পরিষেবা চালু করতে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসেন কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, হাসপাতালের সুপার, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক চিকিৎসকেরা হাজির ছিলেন। উল্লেখ্য, আর জি কর কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে অনুরোধ করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ বিভাগে মোট ৭৫০টি শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে ১৩টি বিভাগে পরিষেবা দেওয়া হয়। সিনিয়র চিকিৎসক ও শিক্ষক চিকিৎসকদের সংখ্যা প্রায় দেড়শো। এ ছাড়া ১২৫ ইন্টার্ন, ৭৫ জন পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ও ২৫ জন হাউস স্টাফ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়ে আন্দোলন, বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা। ফলে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও সিনিয়র চিকিৎসক ও শিক্ষক চিকিৎসকেরা হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ বিভাগ ও জরুরি বিভাগের পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেছিলেন। তবে দিনের পর দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের। আবার বহির্বিভাগ বন্ধ দেখে অনেক রোগীকে জরুরি বিভাগে ভিড় করছেন। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত বহির্বিভাগ চালু করতে তৎপর কল্যাণী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিষেবা না পেয়ে রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন এটা কখনও কাম্য নয়। সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আপাতত তাঁরা যাতে বহির্বিভাগেও পরিষেবা স্বাভাবিক রাখবেন।’’ অধ্যক্ষের বক্তব্যের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন হাসপাতালে সুপার অতনু বিশ্বাস। তবে কবে বহির্বিভাগের দরজা খুলবে, তা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।