লুকিং গ্লাসে ধরা পড়েছিল চুড়ি পরা হাতটা জানলার সীমানা গলিয়ে বেরিয়ে আছে বেশ কিছুটা। হাতে ধরা মোবাইল ফোন, ওড়নায় মুখ মুছে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত তরুণীর ঠোঁটের কোণে তেরছা হাসি।
বাস থামিয়ে কন্ডাক্টর সতর্ক করতেই ফেরত পেয়েছিলেন উত্তরটা— ‘আমার মোবাইল, আমার হাত, তোমার কি ভাই!’
ছুটন্ত বাস থেকে হাত-মুখ-কখনও বা আস্ত মাথা— জানালা গলে বেরিয়ে থাকা সেই সব অসর্তক চেহারাগুলো গ্রাম-মফসসলের রাস্তায় চোখে পড়া নতুন নয়। দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির খবরও নতুন নয়। নতুন নয়, তাঁদের সতর্ক করার নির্নিমেষ চেষ্টাও। তবে সাড়া মেলে না।
পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ জুড়ে পুলিশের ছলাকলা। কখনও কঠোর কখনও বা নরম। হেলমেটের জন্য জোরাজুরি। এমনকি জেলা জুড়ে তা নিয়ে সতর্ক করতে পুলিশ সুপারের দেড়শো কিলোমিটার বাইক হাঁকানো— চেষ্টার সত্যিই ত্রুটি নেই। তা সত্ত্বেও কখনও হাত, কখনও মাথা, দুর্ঘটনার বিরাম নেই। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন লালবাগের সব্জি কাটরায়। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, এ বছর রাজ্য পরিবহণ দফতরে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। সে টাকা জেলা সদরের পাশাপাশি ব্লক ও মহকুমা স্তরে দেওয়া হয়েছে। টাকা খরচ করে ‘ইউসি’ দিলে ফের অর্থ আসবে। তেমনি শুধু জেলা সদরের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে। তা দিয়ে জেলাজুড়ে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচিও নেওয়া হয়। তবে সে কথা মানছে কে?
বাসের জানলার মধ্যে “ভুল বানানে হলেও লেখা— ‘হাত বাহিরে রাখিবেন না।’ তবে, তা নিয়ে সতর্ক করতে গিয়ে ফিরে আসে ওইরকমই ট্যারা বাঁকা উত্তর।
গত তিন বছরে, কখনও ইসলামপুর কখনও কান্দি, কিংবা বড়ঞায় না হয় লালবাগ— অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেই চলেছে।
তবে রবিবার লালবাগের ওই দুর্ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিক সংগঠন। সোমবার থেকে বহরমপুরে জেলা বাস টার্মিনাসে বাস মালিকদের তরফ থেকে যাত্রীদের সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে। অনর্গল হেঁকে চলেছেন এক কর্মী— ‘বাসের জানলার বাইরে হাত বা মাথা বের করবেন না। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বাসকর্মীরাও যাতে বিষয়টি দেখেন সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হচ্ছে।
জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক শ্যামলকুমার সাহা বলছেন, ‘‘আমরা বরাবরই বাস কর্মীদের মাধ্যমে যাত্রীদের সচেতন করার চেষ্টা করি। যাত্রীদেরও এ বিষয়ে আর একটু সজাগ থাকা উচিৎ।’’