মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
সর্ষের মধ্যে ভূত! এমনই অভিযোগটা উঠেছে। রোগী পরিজনদের অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সর্বত্রই দালালদের বাড় বাড়ন্ত। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত থেকে শুরু করে, নানা ডাক্তারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে দালালরাজ চলছে। অভিযোগ, এই দালালরাজের পিছনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাংশ জড়িত। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, ‘‘দালাল চক্রের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দালালচক্র বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কোনওভাবে হাসপাতালের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
গত মঙ্গলবার এক স্বাস্থ্যকর্মীকে মারধরের ঘটনায় এমন দালালরাজের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্যকর্মীর অভিযোগ পেয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বহরমপুর থানায় অভিযোগ করেছিল। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে এক জনকে গ্রেফতারও করেছে। শুক্রবার তাকে বহরমপুরে জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
কীভাবে দালালরাজ চলছে? সূত্রের খবর, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলেই দালালরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন প্রতি বছর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্তের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় পর্যাপ্ত রক্তদান শিবির না হওয়ায় রক্তের ঘাটতি থাকে। তখন দালালরা টাকার বিনিময়ে রোগী ও পরিজনদের রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করে। মাঝে মধ্যে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজনেরা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে থেকে রক্তের দালালদের ধরে কখনও পুলিশ কখনও বা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। তার পরে দুদিন ঠিক থাকার পরে যে কে সেই হয়ে যায়।
একই ভাবে সিটি স্ক্যান, এমআরআই-এর মতো পরীক্ষায় রোগীর খুব চাপ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ফলে অপেক্ষাকৃত কম জরুরি দরকার এমন রোগীদের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করানোর দিন পেতে ৭-১০ দিন সময় লেগে যায়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে নেমে পড়ে দালালচক্র। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পরীক্ষার জন্য যে দিন দিচ্ছে তার আগেই সিটি স্ক্যান, এমআরআই করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোগীর পরিজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। এমআরআই করার জন্য দেড় হাজার দু’হাজার পর্যন্ত দর হাঁকাচ্ছে দালালরা। অনেকেই টাকা দিয়ে সে সব পরীক্ষা সারেন। অথচ সে সব পরীক্ষা নিখরচায় হওয়ার কথা।
দালালদের মারফত কীভাবে আগে পরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠেছে। রোগীর পরিজনেরা বলছেন, সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সব হয়ে যায়। মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকরা দালালদের সুযোগ না দিলেই এটা বন্ধ হবে।