একই নোটে পৃথক ফল নদিয়ায়

ভোট-রঙ্গ বহু বার হয়েছে। কিন্তু নোটের রঙ্গ? নাহ্, বড় একটা দেখা যায়নি। পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণার পরে এ বার সেটাও দেখে নিল নদিয়া।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার ও কল্লোল প্রামাণিক

রানাঘাট ও করিমপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share:

পুরোনো নোটেই অনায়াস বিকিকিনি। মানিকপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভোট-রঙ্গ বহু বার হয়েছে। কিন্তু নোটের রঙ্গ?

Advertisement

নাহ্, বড় একটা দেখা যায়নি। পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণার পরে এ বার সেটাও দেখে নিল নদিয়া।

কোথাও অচল নোটে গতি আনল কার্তিকের মূর্তি। কোথাও আবার রাসের মেলায় দিব্যি হাতবদল হল পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটের। খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা দু’জনেই।

Advertisement

রানাঘাটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। সেই ব্যাঙ্কের সামনে গাছতলায় বেশ কয়েকটি কার্তিকের প্রতিমা নিয়ে বসেছিলেন কুপার্স ক্যাম্পের কৃষ্ণ পাল ও কায়েতপাড়ার অনাথ পাল। কিন্তু এ কী! সব কার্তিকের উচ্চতা একই রকম। কোনও ছোট-বড়-মেজো-সেজো নেই। দামও এক—পাঁচশো টাকা।

ক্রেতারাও প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন। অন্য বার তো এমন হয় না? হাসতে হাসতে বিক্রেতারাও বলেছেন, ‘‘অন্য বারও তো পাঁচশো-এক হাজারের নোট বাতিল হয় না। এত খুচরোর আকালও থাকে না।’’ কৃষ্ণ ও অনাথ জানান, নানা আকারের মূর্তি তাঁরাও এ বারে তৈরি করেছেন। কিন্তু বাজারে এনেছেন শুধু পাঁচশো টাকার দামের মূর্তি। কারণ, এই ক’দিনে তাঁরা ভালই বুঝেছেন, মূর্তি বিক্রি করতে গিয়ে তাঁদের খুচরো সমস্যায় পড়তে হবে।

এ দিনও অনেকে মূর্তি নিয়ে দর-দাম করেছিলেন। কিন্তু ওই দুই বিক্রেতার এক গোঁ, ‘‘আমরা পাঁচশো টাকার নোট নেব। কিন্তু দাম কমাব না।’’ আজ, বুধবার কার্তিক পুজো। ফলে আগের দিন কার্তিকের চাহিদাও ছিল ভালই। ক্রেতাদের অনেকেই ব্যাঙ্কে লাইন না দিয়েই পাঁচশো টাকা দিয়ে মূর্তি কিনে নিয়েছেন। সকাল সকাল খুচরো ঝামেলায় না গিয়ে মূর্তি বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছেন বিক্রেতারও।

পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটের গুঁতোয় পর্যটক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে গিয়েছে নবদ্বীপ ও শান্তিপুরের রাসে। এ দিকে, সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুরের মানিকপুরের রাসে আবার উল্টো ছবি। সেখানে রাসের মেলায় উপচে পড়ছে ভিড়। কারণ, রাস কমিটি ও মেলার দোকানের মালিকেরা যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট নেবেন। মুখে মুখে সে কথা রটে গিয়েছে আশপাশের গ্রামে।

ফলে সোমবার থেকে শুরু রাসের মেলায় ভিড় উপচে পড়েছে। নাগরদোলা থেকে মনোহারি, রোল থেকে আইসক্রিম— সব দোকানেই কালো মাথার ভিড়। হোগলবেড়িয়া থেকে মেলায় এসেছিলেন শুকদেব প্রামাণিক। তাঁর কথায়, ‘‘মেলায় এসে রথ দেখা, কলা বেচা দু-ই হয়ে গেল। পাঁচশো টাকাও খরচ হল, বাড়ির সকলের শখ-আহ্লাদও পূরণ হল। এখানে পাঁচশো টাকার নোট না নিলে মেলায় আসতে পারতাম না।’’

ঠিক এই বিষয়টিই মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাস কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ীরা। মানিকপুর লোকনাথ সেবাশ্রম সঙ্ঘ পরিচালিত রাস উৎসব কমিটির সম্পাদক রামকৃষ্ণ পাল জানান, যে দিন থেকে পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে, সেদিন থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই এলাকার ব্যবসা। মানুষ এত খুচরো টাকা কোথা থেকে পাবেন? তাছাড়া পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট বাতিল হলেও সেগুলো তো ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে নতুন টাকা তোলা যাবে। তার জন্য অনেক সময়ও রয়েছে। সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত।

রাস কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা লক্ষ্ণণ মণ্ডলও বলছেন, ‘‘আমাদের এই রাসের মেলায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। বারো দিনের এই মেলায় ভাল বেচাকেনা হয়। ফলে এমন সিদ্ধান্ত না নিলে মেলাটা জমত না। নিরাশ হতেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই।’’

মেলায় মিষ্টি বিক্রেতা সাধন প্রামাণিক, নাগরদোলার মালিক দিলীপ সরকারেরা বলছেন, ‘‘আমরাও মেলা কমিটির কাছে কৃতজ্ঞ। এমন সিদ্ধান্ত না নিলে সত্যিই ব্যবসা মার খেত। সবথেকে বড় ব্যাপার, মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাদের বহু টাকা খুচরো করে দিচ্ছেন। তবে একশো টাকার জিনিস বিক্রি করে পাঁচশো টাকা খুচরো করাটা সমস্যার। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদেরও অনুরোধ করছি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে।’’

ঘুগনি বিক্রেতা অভিজিৎ ঘোষ, বাদাম বিক্রেতা সাহাবুদ্দিন শেখ, ফুচকা বিক্রেতা সমীর পালরাও বলছেন, ‘‘পাঁচশো টাকার নোট নিতে আমাদেরও আপত্তি নেই। তবে কেউ যদি কুড়ি টাকার ফুচকা খেয়ে পাঁচশো টাকা দেন, তাহলে কিন্তু মুশকিল।’’

মাইকে মেলা কমিটির পক্ষ থেকেও ঘোষণা করা হচ্ছে—‘মেলায় পাঁচশো টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের অনুরোধ, আপনারা কেনাকাটা করুন। কিন্তু দোকানগুলোকে টাকা ভাঙানোর মাধ্যম হিসেবে দয়া করে ব্যবহার করবেন না।’

সব মিলিয়ে গড়গড়িয়ে চলছে অচল নোট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement