সুপারের কাছে নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
রোগীর বাড়ির পরামর্শ মেনে স্যালাইন দিতে রাজি না হওয়ায় ‘শাস্তি’ হিসেবে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের এক নার্সকে মারধর করে রোগীর বাড়ির লোকজন। গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃহস্পতিবার ফের নার্স নিগ্রহের ঘটনা ঘটে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বার বার রোগীর বাড়ির লোকজনের হাতে নার্স নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বহরমপুরে মৌন-মিছিল বের করেন নার্সরা। পরে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে নিরাপত্তার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা। মুর্শিদাবাদের সিএমওএইচ প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘নার্সদের নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। আমি তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে জেলাপ্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব বলে জানিয়েছি।’’
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার এক জন শিক্ষকের মৃত্যু হয়। তার পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে কর্তব্যরত এক জন নার্সকে মারধর করেন রোগীর পরিবারের লোকজন। ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা দীপা দাস নামে ওই নার্সকে গুরুতর আহত অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নার্সরা হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান।
পরে বহরমপুর খানার পুলিশ মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়ে চার জনকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃত ওই চার জনকে সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক জামিনে মুক্তি দেন।
গুরুতর আহত দীপা কিছুটা সুস্থ হলেও এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে তাঁর সহকর্মীরা জানান। এ দিকে যে কোনও কারণে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই রোগীর পরিবারের লোকজনের হামলা চালানোর ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন হাসপাতালের নার্সরা। নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। তবে বিক্ষোভ-আন্দোলনের পথ সরে আসার জন্য নার্সদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও শাসক দলের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এখ জন নার্স বলছেন, ‘‘আমরা যাতে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না কির, সে জন্য আমাদের উপরে চাপ করা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ দেবদাস সাহা বলছেন, ‘‘যে কোনও রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ডাক্তার-নার্স নিগ্রহের ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস মিলেছে মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও। তবুও আতঙ্ক যেন কাটতেই চাইছে না!