প্রতীকী ছবি।
দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই তিরিশের কোঠা থেকে নামছে না। বুধবারই একশো পেরিয়ে গিয়েছে কনটেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যাও। গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও। এই পরিস্থিতিতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহে দু’দিনের লকডাউন বাস্তবায়িত করতে কড়া পদক্ষেপ করার কথা বলছে জেলা প্রশাসন।
গত ৮ জুলাই বাফার জ়োন মিলিয়ে দিয়ে কন্টেনমেন্ট জ়োনের এলাকা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময়ে নদিয়ায় কন্টেনমেন্ট জ়োন ছিল মাত্র ২৫টি। তার পর থেকে এক দিকে যেমন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে কন্টেনমেন্ট জ়োন। সোমবার পর্যন্ত জেলায় সক্রিয় কন্টেনমেন্ট জ়োন ছিল ৯৩টি। বুধবার সেটা বেড়ে হয়েছে ১০৪। সোম থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে জেলায় করোনা ধরা পড়েছিল ৩৮ জনের। মঙ্গল থেকে বুধবার সকালের মধ্যে ধরা পড়েছে আরও ৩৬ জনের।
জেলা প্রশাসনের করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আগে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সেই হিসেবে কন্টেনমেন্ট জ়োন হত না। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে ততই করোনা আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যাও। কেননা আগে সাধারণত অন্য রাজ্য থেকে ফিরে নিভৃতবাস কেন্দ্রে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদেরই সংক্রমণ মিলত। ১৪ দিনের মধ্যএ কোনও উপসর্গ দেখা না গেলে বা রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই বাড়ি যেতে পারতেন। রিপোর্ট পজ়িটিভ হলে কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হত। ফলে তাঁর বাড়ির এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন করার প্রয়োজন হত না।
কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। এখন পরিযায়ী শ্রমিকেরা সে ভাবে আর আসছেন না। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা নিভৃতবাসের মেয়াদ শেষে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। মুশকিল হল, উপসর্গ না থাকায় অনেককেই সাত দিন পরে রিপোর্ট আসার আগেই নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে এঁদের অনেকেরই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে। আর সেই এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন করতে হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়। এখন যাঁদের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে তাঁদের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক নেই বললেই চলে। বেশির ভাগই আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি, তাঁরা বাড়িতে থাকা অবস্থাতেই তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাড়িতে থাকা অবস্থাতেই রিপোর্ট আসছে।আর সেই কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যাও বাড়ছে।
কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে আগাগোড়াই লকডাউনের নিয়ম জারি রয়েছে। এরই মধ্যে নতুন করে বৃহস্পতি ও শনিবার রাজ্যের আর সব জায়গার মতো সার্বিক লকডাউন হচ্ছে গোটা জেলায়। এ দিন জেলাসদর কৃষ্ণনগর-সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় মাইকে প্রচার চালানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শহরে ঢোকার রাস্তাগুলিতে চেকিং থাকবে, যাতে বাইরের লোক ঢুকতে না পারে। জেলার সর্বত্রই নাকা চেকিং চলবে। বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে পুলিশের গাড়ি। বাজার এলাকাগুলিতে পুলিশ ও সিভিক ভল্যান্টিয়ার মোতায়ন থাকবে। লকডাউন ভাঙলে গ্রেফতার করা হবে। ওষুধের দোকান বা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বাদে অন্য কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে মালিককে গ্রেফতার করা হবে। খুব জরুরি প্রয়োজনে কাউকে রাস্তায় বেরোতে হলে মাস্ক পরতেই হবে। অন্যথায় আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিটি থানা এলাকায় বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে লকডাউন না মানার প্রবণতা দেখে গিয়েছে আগেই। সেগুলিতে বিশএষ নজরদারি থাকবে। মহকুমাশাসক এবং বিডিও-রাও নজরদারিতে বেরোবেন। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মণীশ বর্মা বলেন, “পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনের আধিকারিকেরাও এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। কেউ লকডাউন ভাঙলে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”