লাখ টাকায় আরব গিয়েও কাজ মেলেনি

বাধ্য হয়ে এঁদেরই অনেকে বেশি রোজগারের আশায় বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি দিচ্ছেন।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক 

মুরুটিয়া শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:১৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

স্কুলের গণ্ডি পেরনো বেকার যুবকদের মাঠের কাজ ছাড়া রুজির বিশেষ রাস্তা নেই সীমান্তের গ্রামে। বাধ্য হয়ে এঁদেরই অনেকে বেশি রোজগারের আশায় বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি দিচ্ছেন।

Advertisement

আর, দালাল-যোগে বিদেশ পাড়ি দিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এঁদের অনেকেই। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে অনেকে ভাল রোজগার করে ফেরেন ঠিকই, অনেকে প্রতারক দালালদের পাল্লায় পড়ে জেরবার হন।

তেহট্টের বেতাই কিংবা মুরুটিয়ার দীঘলকান্দির বহু মানুষ বছর কুড়ি আগে থেকেই বিদেশ কাজ করছেন। প্রথম দিকে হাতে গোনা কয়েক জন গেলেও সময় যত গড়িয়েছে বিদেশে কাজে যাওয়ার হিড়িক বেড়েছে ওই সমস্ত এলাকায়। বর্তমানে দীঘলকান্দি গ্রামের প্রায় তিনশো মানুষ বিদেশে কাজ করেন।

Advertisement

গত এগারো বছর ধরে সৌদি আরবে কাজে করছেন দীঘলকান্দির দীপঙ্কর বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “২০০৭ সালে স্থানীয় এক এজেন্টের মাধ্যমে কাঠের কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম। সাড়ে পাঁচ বছর পরে এক বার বাড়ি ফিরি কয়েক মাসের জন্য। তার পরে আবার সৌদি আরবের রিয়াধে। সেখানে টানা পাঁচ বছর কাজ করে পাকাপাকি ফিরে এসেছেন গ্রামে।”

দুবাইয়ের কাজ থেকে সাত মাস আগে ছুটিতে গ্রামে এসেছিলেন বছর আটচল্লিশের সঞ্জয় মণ্ডল। ক’দিন বাড়িতে কাটিয়ে আবার তিনি দুবাইয়ে গিয়েছেন। তিনি জানান, অভাবের কারণেই ২০০৭ সালে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে রেখে ঝুঁকি নিয়ে এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ৭৬ হাজার টাকা খরচ করে কাতারে কাজে গিয়েছিলেন। তখন ঠিকঠাক কাজ পেলেও সমস্যা হয়েছিল পরের বার। ২০১২ সালে এজেন্টকে এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একই কাজ নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে যান। সেখানে দু’মাস থেকেও কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। পরে ওই এজেন্টকে বাড়তি কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে দুবাই যান। এখনও তিনি সেখানেই কাজ করেন।

মাস ছয়েক আগে দুবাইয়ে কাজে গিয়েছেন বেতাইয়ের গোপাল সরকার। তাঁর বাবা সুভাষ সরকার বলেন, “ছেলেকে এক রকম কাজের কথা বলে ওখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে ও জানতে পারে, ওকে অন্য কাজ করতে হবে। এখন ওকে নতুন করে কাজ শিখতে হচ্ছে। তবে মজুরি পাচ্ছে।”

দীপঙ্করের মতে, যে সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার কথা হচ্ছে, তাদের সম্পর্কে ভাল করে খোঁজখবর নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক সংস্থা রয়েছে, যারা বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য লোক পাঠায়। কিন্তু এই কারবারে অনেক প্রতারকও আছে যারা শুধু টাকা নিয়ে পাসপোর্ট ও ট্যুরিস্ট ভিসা করে পাঠিয়ে দেয়। সেই দেশে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।

বিদেশে কর্মরত বেতাইয়ের ননীগোপাল বিশ্বাসও জানান, কাজে যেতে হলে কোনও সংস্থার মাধ্যমেই যেতে হবে। যাঁদের নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন আছে, সেই সব সংস্থার মাধ্যমেই যাওয়া উচিত। এই সব সংস্থা যুবকদের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে তারা পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই বিদেশে কাজে পাঠায়। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। অন্য দিকে, স্থানীয় এজেন্টদের যোগাযোগ রয়েছে বগুলা বা কলকাতার এজেন্টদের সঙ্গে। তারা বিদেশের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে এখান থেকে লোকজনকে কাজে পাঠান। অনেক এজেন্টই ভাল, যাঁদের মাধ্যমে বহু মানুষ বিদেশে কাজ পেয়েছেন, তাঁদের পাঠানো টাকায় চাঙ্গা হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। তবে তারই মধ্যে কিছু এজেন্ট মিশে আছে, যারা আসলে প্রতারণা করতেই জাল বিছিয়ে বসেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement