—প্রতীকী চিত্র।
শুধু রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলই নয়, বিরোধী বিজেপিও টাকা খরচের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই ব্যর্থ। বিজেপির তরফে এই পিছিয়ে থাকার জন্য শাসক দলের বিরোধিতা ও প্রশাসনিক অসহযোগিতার কথা বলা বলেও তা পুরোপুরি সত্য নয়। বরং টাকা খরচের অঙ্কে পিছিয়ে পড়া বিজেপির পঞ্চায়েতগুলিতে খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, দলের সদস্যদের প্রবল কোন্দল উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের মিলিজুলি বোর্ড হয়েছে, সেগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই তিন দলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও মতানৈক্যের কারণেও টাকা খরচ করা যায়নি।
চাকদহের হিংনাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি একক ভাবে দখল করলেও টাকা খরচের অঙ্কে অনেকটাই পিছিয়ে। এখানে দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘ দিনের। একই কারণে পিছিয়ে বেতাই ১ ও ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতও। অথচ এই তেহট্ট ১ ব্লক থেকেই পর পর দু’বার বিজেপির জেলা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদেরই নেতৃত্বে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালিত হয়েছে। একক ভাবে বিজেপির দখলে রয়েছে চাপড়া ব্লকের বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতও। সেখানেও একই অবস্থা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, পঞ্চায়েত পরিচালনার ক্ষেত্রে বিজেপি সদস্যদের অনভিজ্ঞতাও পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই যাঁদের প্রধান-উপপ্রধান করা হয়েছে তাঁরা অভিজ্ঞ বা যোগ্য নন। যেমন নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত। এই বিজেপি ও সিপিএম মিলে সেখানে বোর্ড গঠন করেছে। কিন্তু প্রধান বা উপপ্রধান পঞ্চায়েত পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, বিজেপির কিছু পঞ্চায়েতে আবার টাকা খরচ করারক্ষেত্রে বিজেপির অনীহাও দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল তাদের কাজ করতে দেয়নি, এমনটা ভোটে প্রচারের লক্ষ্যেই এই নিষ্ক্রিয়তা বলে কর্তাদের অনেকে মনে করছেন। নদিয়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ২০১১ সালে তৃণমূল যখন ক্ষমতায় আসে তখন বিরাট সংখ্যক গ্রাম পঞ্চয়েত সিপিএমের দখলে ছিল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্যন্ত সিপিএম এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গে স্থানীয় ভাবে সমঝোতা করেছিল। কিন্তু বিজেপি সেই পথে হাঁটছে না। বর্তমানেও কিন্তু টাকা খরচে পিছিয়ে পড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিকায় একক ভাবে সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনও পঞ্চায়েতের নাম নেই।
তবে অনেক ক্ষেত্রে টাকা খরচ করতে না পারার পিছনে বিরোধী দলগুলির সমন্বয়ের অভাবও সামনে এসেছে। এর মধ্যে এমন বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের নাম আছে যেগুলি বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস মিলে বোর্ড গঠন করেছে। কোনওটায় বিজেপির প্রধান, কোনওটায় সিপিএমের। বিশেষ করে সেগুলিতেই কাজের ক্ষেত্রে মতানৈক্য অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে আসছে। (চলবে)