ছাড়পত্র ছাড়া বাজারে আর নয় টোটো কোম্পানি

হালকা-পলকা নড়বড়ে টোটো বা টুকটুক আর চলবে না। সে চিনে গাড়ি হোক বা এলাকায় যন্ত্রাংশ জুড়ে বানিয়ে ফেলাই হোক। যাত্রী নিয়ে রাস্তায় নামতে গেলে ন্যূনতম মান থাকতে হবে গাড়ির।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৯
Share:

রাস্তায় এখন যে টোটো চলছে।

হালকা-পলকা নড়বড়ে টোটো বা টুকটুক আর চলবে না। সে চিনে গাড়ি হোক বা এলাকায় যন্ত্রাংশ জুড়ে বানিয়ে ফেলাই হোক। যাত্রী নিয়ে রাস্তায় নামতে গেলে ন্যূনতম মান থাকতে হবে গাড়ির।

Advertisement

বাঙালি যাদের আদর করে টোটো বা টুকটুক বলে ডাকে, তাদের আসল নাম ‘ই-রিকশা’। জানুয়ারির গোড়ায় নদিয়ায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে কোনও সংস্থার ই-রিকশা কেনা যেতে পারে। শর্ত শুধু দু’টি — ১) সংস্থার ‘আই-ক্যাট’ অনুমোদন থাকতে হবে। ২) সংস্থাটির ট্রেড সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশনও (টিসিআর) থাকতে হবে। মুর্শিদাবাদে মাঝ-ডিসেম্বরেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশ।

কোনও সংস্থার তৈরি গাড়ি রাস্তায় নামার যোগ্য কি না, সে সার্টিফিকেট দিতে পারে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজি’ (যার ডাকনাম ‘আইক্যাট’)। হরিয়ানার এই সংস্থাটি গাড়ির ইঞ্জিন, ধোঁয়া, সুরক্ষা শুধু নয়, চলার সময়কার ঝাঁকুনি, কাঁপুনি, শব্দ— সব দিক বিচার করে নির্মাতা সংস্থাকে অনুমোদন দেয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ‘আইক্যাট’ অনুমোদিত পাঁচটি সংস্থা আবেদন করেছে। আরও কিছু সংস্থা এগিয়ে আসতে পারে বলে খবর।

Advertisement

এই নির্দেশের ফলে এলাকার কোনও কারখানা, টোটো সারাইয়ের দোকান থেকে টোটো বেচাকেনা কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। টোটো বিক্রি বন্ধ না করায় বহরমপুরে ১৭টি, বেলডাঙায় ২টি এবং কান্দিতে ২টি দোকানে তালা ঝুলিয়েছে প্রশাসন। এই সব জায়গায় তৈরির টোটোর সঙ্গে অনুমোদিত সংস্থার তৈরির টোটোর কী ফারাক?

প্রশাসন সূত্রের খবর, ফারাক বেশ কিছু জায়গায়। যেমন: ১) সাধারণ টোটোর ওজন যেখানে ২২০-২৫০ কেজি, অনুমোদিত গাড়ির ওজন গড়ে ৩২০ কেজি ২) অনুমোদিত টোটো অনেক শক্তপোক্ত ৩) ইঞ্জিন ও ব্রেক বেশি শক্তিশালী ৪) শর্ট সার্কিট হওয়ার ঝুঁকি নেই ৫) বেশি টেঁকসই ৬) অনুমোদিত টোটোয় প্রতি যন্ত্রাংশে ওয়্যার‌্যান্টি থাকবে ৭) প্রথম ছ’মাসে ছ’বার সার্ভিসিং ৮) ইঞ্জিন ও চেস্ট নম্বর থাকবে, বিমা করাতে সুবিধা ৯) অনুমোদিত টোটো কোনও ভাবে দুর্ঘটনায় পড়লে ক্ষতিপূরণ মিলবে ১০) মোটর ভেহিক্যালস আইনে অন্য সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যাবে।

রাস্তায় নামতে চলেছে নতুন যে টোটো।

তবে সবচেয়ে বেশি ফারাক দামে। সাধারণ টোটো যেখানে ৮০-৯০ হাজার টাকায় রাস্তায় নেমে যায়, এই অনুমোদিত টোটো কিনতে লাগবে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার। নদিয়ায় ইতিমধ্যেই পুরনো টোটো পাল্টে নতুন গাড়ি নেওয়ার জন্য ‘এক্সচেঞ্জ
অফার’ দেওয়া হচ্ছে। পুরনো টোটো বাবদ ৩৫ হাজার টাকা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সহজ কিস্তিতে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলছে প্রশাসন। মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হবে। যাঁরা এখন টোটো চালাচ্ছেন বা যাঁদের পুরসভা বা ব্লক অফিসের টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর আছে, তাঁদেরই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। কোন টোটো কোন রুটে চলবে, তার উল্লেখ থাকবে লাইসেন্সে।

তবে এখনই কাউকে চাপাচাপি করা হচ্ছে না। কেননা রাজ্যের তরফে পুরনো টোটো বাতিল সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা এখনও আসেনি। বিশাল সংখ্যক টোটো রাতারাতি যে বদলে ফেলা যে সহজ নয়, বুঝতে পারছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। টুকটুক চালক স্বপন অধিকারী বলেন, ‘‘আমি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ছ’মাস আগে টোটো কিনেছি। এখন নতুন করে আমার পক্ষে ই-রিকশা কেনা সম্ভব নয়। আগের টাকাই শোধ হয়নি।’’

কৃষ্ণনগর টোটো গাড়ি ড্রাইভারস ইউনিয়নের সম্পাদক তপন কুণ্ডু বলেন, “ভাল উদ্যোগ। কিন্তু গরিব লোকগুলো কী করবে? দু’টো ঋণ কী করে এক সঙ্গে শোধ করবেন তাঁরা?”

বহরমপুর টুকটুক সমিতির সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দে বা টুকটুক উচ্ছেদ বিরোধী সংগঠনের সভাপতি বাপি সাহাদের হুঁশিয়ারি, পুরনো টুকটুকের জন্য যদি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না হয়, তাঁরা আন্দোলনের রাস্তায় যেতে বাধ্য হবেন। সব দিক দেখে-শুনেই এগোতে চাইছেন প্রশাসনের কর্তারা।

—নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement