ফাইল চিত্র।
দু’ একটা স্ফূলিঙ্গ, তার পর তুমুল শব্দ করে ফাটল বাজি— দোদোমার ধোঁয়া কাটলে দেখা গিয়েছিল মাটিতে পড়ে রয়েছে বছর সাতেকের মেয়েটা। সারা গা ঝলসে গিয়েছে।
দেওয়ালির রোশনাই শিকেয় উঠে গিয়েছিল, কাশিমবাজার থেকে মেয়েকে পাঁজকোলা করে বাবা ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছেই তিনি বুঝেছিলেন, আর যাই হোক, সে হাসপাতালে বার্ন ইউনিট বা পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনও বিভাগ নেই।
তাই ৭ বছরের সুকন্যা মিত্রের ঠাঁই হয়েছিল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, খাতায় কলমে বার্ন ওয়ার্ড নামে একটা ইউনিট রয়েছে বটে, তবে তা সার্জিক্যাল বিভাগের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে। ‘‘এ ছাড়া কীই বা করতে পারি বলুন!’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপার সুহৃতা পাল সসঙ্কোচে বলছেন।
কলকাতার হাতে গোনা খান কয়েক হাসপাতাল ছাড়া জেলার সরকারি হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের চেহারাটা সর্বত্র একই রকম। অন্য কোনও বিভাগের সঙ্গে কোনও ক্রমে জুড়ে থাকা, কখনও বা সেটুকুও নয়। আর তার ফলে, কালীপুজোর রাতে বাজি-দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা করতে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিকে রেফার রোগেরই শরণাপন্ন হতে হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য দাবি করছে, জেলার পাঁচটি মহকুমা হাসপাতাল ও তিনটে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বার্ন ওয়ার্ড রয়েছে। তবে, তা নিছকই খাতায় কলমে। ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যেমন বার্ন ওয়ার্ড রয়েছে। তবে তা চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতাল চালুর প্রথম দিন থেকেই খোলা যায়নি। সুপার প্রবীর মাণ্ডি বলেন, ‘‘বার্ন ওয়ার্ড চালাতে গেলে ২৪ ঘণ্টার জন্য চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসকই নেই হাসপাতালে, তাই ওই ওয়ার্ডের জন্য আলাদা চিকিৎসক রাখব কী করে!’’
ছবিটা নদিয়াতেও প্রায় একই রকম। জেলার এক পরিচিত সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘খাতায় কলমে আমাদের যা ব্যবস্থা রয়েছে তাতে রেফার করার কোনও প্রশ্ন নেই। তবে, ও সব নামকা ওয়াস্তে। জেলার কোনও হাসপাতালেই বার্ন ইউনিট নেই।’’ শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে দশটি বেড রয়েছে। তার মধ্যে মহিলাদের জন্য পৃথক পাঁচটা। তবে আগুনে পুড়ে কেউ এলে তাকে পাঠানো হয় সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার জানান, ‘‘কালীপুজোর সময়ে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকি। এই সময়ে বাজি-পটকা পোড়াতে গিয়ে অনেক সময়ে আগুন ছিটকে শাড়িতে লেগে পুড়ে যায়। তবে তাঁদের রাখতে হয় ওই সার্জিক্যাল ওয়ার্ডেই।’’