রক্তাল্পতায় ভুগছে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক!
মুমূর্ষু রোগীর জন্যে এক ইউনিট রক্ত চাইলে সটান জবাব, ‘‘ডোনর নিয়ে আসুন।’’ পরপর ক’দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিত্রটা এমনই।
২৩ অক্টোবর ডোমকলের এক সংস্থার রক্তদান শিবির থেকে ৫৫ প্যাকেট রক্ত মিলেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তা দিয়ে সোমবার সকাল থেকে রক্তের চাহিদা মেটানো গিয়েছে।
কিন্তু মঙ্গলবার রাতে গিয়ে দেখা যায় কোনও গ্রুপেরই রক্ত নেই। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রভাসচন্দ্র মৃধা জানান, রক্ত সঙ্কট মেটাতে রোগীর বাড়ির লোকজনকে ডোনার সঙ্গে করে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উপায় কিছু নেই।
পুজোর আগে চারটে রক্তদান শিবির থেকে মোট ১৭৭ ইউনিট রক্ত পাওয়া যায়। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রক্ত দিয়ে পুজোর সময়টুকু চালানো হলেও এখন রক্ত সঙ্কট শুরু হয়েছে।
এ দিকে জেলায় নথিভূক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ৬৬৫ জন। ফলে হাসপাতালের সাধারণ রোগী ও রোগীর বাড়ির লোকজনের পাশাপাশি রক্তদান শিবিরের দিকে তাকিয়ে থাকেন থ্যালাসেমিয়া রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজন। ওই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের প্রতি মাসে গড়ে ২৫০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কোনও রক্তদান শিবির হচ্ছে জানতে পারলেই পরের দিন ওই রোগীদের ভিড় থাকে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে।
এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেই প্রয়োজন হলে সেই রোগীকে বিনামূল্যে রক্ত দিতে বাধ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরে এক দিকে সরকারি হাসপাতালের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তদান শিবিরের গুরুত্বও কমে গিয়েছে। ফলে রক্তদান শিবির আয়োজন করা থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। আবার রক্তদান শিবির হলেও আগ্রহী রক্তদাতার সংখ্যাও কমে গিয়েছে।’’
তবে চিকিৎসক প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত থাকা পর্যন্ত কোনও রোগীর বাড়ির আত্মীয়কে ফেরানো হয় না। তবে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না থাকলে তখন বাধ্য হয়ে বলতেই হয় ডোনার নিয়ে আসার কথা।’’
ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘বাম আমলে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সারা বছরের রক্তদান শিবিরের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হত। এখন রক্তদান শিবির আয়োজন করতে হলে মাসের মাস জানাতে হচ্ছে।’’ এমনও হয়েছে দিন ঘোষণা করেও রক্তদান শিবির বাতিল করতে হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। এর ফলে রক্তদাতার সংখ্যা কমছে বলে তাঁর দাবি।