ধুলোর আড়ালে ৬

অবহেলায় পড়ে মতিঝিল

প্রায় ছ’মাস আগে ঝড়ে গুঁড়িশুদ্ধু আমগাছ ভেঙে পড়েছিল আলিবর্দি খাঁয়ের বড় জামাই, ঘসেটি বেগমের (মেহেরুন্নেসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খাঁয়ের সমাধির ওপর

Advertisement

মৃন্ময় সরকার

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

পলেস্তারা খসে পড়েছে মতিঝিল মসজিদের। লালবাগে। নিজস্ব চিত্র

প্রায় ছ’মাস আগে ঝড়ে গুঁড়িশুদ্ধু আমগাছ ভেঙে পড়েছিল আলিবর্দি খাঁয়ের বড় জামাই, ঘসেটি বেগমের (মেহেরুন্নেসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খাঁয়ের সমাধির ওপর। পাঁচিল-সহ ওই সমাধি ছাড়াও ভেঙে পড়ে সিরাজের ভাই এক্রামুদ্দৌলার সমাধি।

Advertisement

যদিও মতিঝিল মসজিদ-সহ ওই গোটা চত্বর রয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (কলকাতা মণ্ডল) অধীনে। তবুও আম গাছের ডাল কেটে সরানো হয়নি। তেমনই সংস্কার করা হয়নি সমাধি-সহ পাঁচিলের ভাঙা অংশও! এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ সহেলী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এ থেকেই প্রমাণিত মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক পুরাসম্পদগুলির বর্তমান হাল কী অবস্থায় রয়েছে!’’

নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খাঁ ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে মতিঝিল মসজিদ নির্মাণ করে ছিলেন। পরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ মসজিদ সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য ২০০৯ সালের ৬ জুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল অধিগ্রহণ করে মসজিদ সংস্কার ও সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের নোটিস ঝুলিয়ে দেয় তারা। সেই সময়ে মতিঝিল মসজিদ-সহ ওই চত্বরে থাকা সমস্ত স্মারক অধিগ্রহণ করা হলেও অধিগ্রহণের আওতার বাইরে রাখা হয় মসজিদের পূর্ব দিক লাগোয়া জমি নিয়ে গড়ে ওঠা ঝিল।

Advertisement

ইতিহাস গবেষকদের মতে, মতিঝিল মসজিদে সিরাজদ্দৌলার দাদু আলিবর্দির খাঁ নিয়মিত নমাজ পড়তে আসতেন। দাদুর হাত ধরে ছোট্ট সিরাজও মতিঝিল মসজিদে আসতেন। তবে নিঃসন্তান আলিবর্দির বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম সিরাজের ছোট ভাই এক্রামুদ্দৌলাকে দত্তক নিয়ে সন্তান স্নেহে পালন করেন। অল্প বয়সে মৃত্যু হলে মতিঝিল মসজিদ চত্বরে এক্রামুদ্দৌলাকে সমাধিস্থ করা হয়। এক্রামুদ্দৌলার মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে মারা যান নওয়াজেস মহম্মদ খাঁ। মতিঝিল মসজিদ চত্বরে পাশাপাশি দু’জনেরই সমাধি রয়েছে।

সমাধি সংরক্ষণের ব্যাপারেও কোনও উদ্যোগ নেয়নি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (কলকাতা মণ্ডল) দফতর। একই ভাবে মহম্মদ নওয়াজেস মতিঝিলের পাড়ে ‘সাংহী দালান’ নামে এক প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। সেই সাংহী দালান বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। মতিঝিল মসজিদের মাথার তিনটি গম্বুজ, চারটি মিনার সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া মসজিদের পূর্ব দিকে নওয়াজেসের দত্তক পুত্র এক্রামুদ্দৌল্লার শ্বেতপাথরের, নওয়াজেসের সেনাপতি শামসের আলি খানের বেলেপাথরের আর এক্রামুদ্দউল্লার শিক্ষকের কালো পাথরের তৈরি সমাধি রয়েছে।

ইতিহাসবিদ রাজর্ষি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মসজিদের গায়ে ফুল ও পাতার নকশাগুলিও ক্ষয়ে গিয়েছে। ওই মসজিদ সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে।’’ মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ ও ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মসজিদ ও সমাধি নিয়ে ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণে বারবার চিঠি দিয়েও সদুত্তর মেলেনি।’’

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (কলকাতা মণ্ডল) পুরাতত্ত্ববিদ তথা হাজরাদুয়ারি সংগ্রহশালার প্রাক্তন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরাতত্ত্ববিদ গৌতম হালদার বলছেন, ‘‘মতিঝিল মসজিদ অধিগ্রহণের পর কিছু কাজ হয়েছে। হাজারদুয়ারি প্রাসাদ ও সংগ্রহশালা সংরক্ষণের কাজের জন্য মসজিদ সংস্কারের কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে মসজিদ সংস্কার হবে পরিকল্পনা রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement