আলোয় সেজেছে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি। ১৮ অগস্ট, ১৯৪৭।
এমন হওয়ার কথা ছিল না। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর একটা সংবাদ হঠাৎ করেই বদলে দিল সব কিছু। উৎসবের পরিবেশ পাল্টে গেল থমথমে, বিষণ্ণ রাতে।
ছটফট করে উঠলেন নদিয়ারাজ সৌরীশচন্দ্র। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলেন রানি জ্যোতির্ময়ী। রেডিয়ো জানিয়েছে, নদিয়ার বেশির ভাগটাই পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের উত্তরপুরুষ, নদিয়া রাজবংশের আটত্রিশতম রাজা সৌরীশচন্দ্র যোগাযোগ করলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে। ভাইসরয়ের পোলো খেলার সঙ্গী তিনি, ডাকেন ‘ডিকি’ নামে। নিজের মন্ত্রিদের সঙ্গে জরুরি সভা সেরে ফোর্ট উইলিয়ামে কম্যান্ডার-ইন-চিফ ফ্রান্সিস বুচারের সঙ্গেও যোগাযোগ করলেন রাজা। কেননা তত ক্ষণে গণক্ষোভে অশান্ত হতে শুরু করেছে নদিয়া। রাজার সেই লোকবল বা অর্থবল নেই যা দিয়ে পাকিস্তান ও পাকপন্থীদের সামলানো যায়। সেনা মোতায়েন করা হল রাতারাতি। সেই সঙ্গে চলছে ডিকি-কে বোঝানো— কেন নদিয়া পাকিস্তানে যেতে পারে না। ভাইসরয় বুঝলেন। বাউন্ডারি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে জরুরি নির্দেশ গেল রাজার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে। শেষে মানচিত্রে বদল ঘটল। পিছিয়ে গেল র্যাডক্লিফ লাইন।
তার মধ্যে কেটে গিয়েছে দু’টো দিন। ১৭ অগস্ট বিকেলে রেডিয়োতে ফের ঘোষণা, কৃষ্ণনগর আর রানাঘাট মহকুমা ফিরছে ভারতে। ১৮ অগস্ট। নদিয়া রাজবাড়ির পতাকা দণ্ডে শেষ বারের মতো উড়ছে গাঢ় মেরুনের উপরে উজ্জ্বল সোনালি রঙে রাজকীয় প্রতীক আঁকা নিশান। বাদ্যকরেরা শেষ বার বাজালেন নদিয়া রাজ্যের নিজস্ব সঙ্গীত ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা।’
একটু বিরতি। রাজকীয় নিশান নামল ধীরে। আর হাওয়ায় দোলা খেয়ে উঠে গেল ভারতের জাতীয় পতাকা। ব্যান্ডে বেজে উঠল ‘জনগণমন অধিনায়ক’। জয়ধ্বনি উঠল স্বদেশের। সৌরীশচন্দ্র আর জ্যোতির্ময়ী দেবীর নামেও জয়ধ্বনি উঠল। পতপত করে উড়তে লাগল তেরঙ্গা।
লেখক: কৃষ্ণনগর রাজ পরিবারের প্রধান