জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য তখন চলছে উচ্ছেদ। সোমবার ফুলিয়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এর আগে বাধা এসেছে বারবার। শেষমেশ ফুলিয়ায় কার্যত বিনা বাধায় জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য উচ্ছেদ অভিযান চালাল নদিয়া জেলা প্রশাসন। যারা উচ্ছেদের পথে প্রধান বাধা ছিল, সেই অনগ্রসর জনজাগরণী মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ আহমেদ আপাতত জেল হেফাজতে।
সোমবার সাতসকালেই শান্তিপুর ব্লকের জ্যোতিপল্লি এলাকা থেকে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য উচ্ছেদের কাজ শুরু করা হয়। হাজির ছিল বিরাট পুলিশ বাহিনী। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস, রানাঘাটের মহকুমাশাসক হরসিমরন সিংহ, শান্তিপুরের বিডিও সুমন দেবনাথ, এসডিপিও (রানাঘাট) লাল্টু হালদার। উদয়পুর, শুকপুকুরিয়া, বেলগড়িয়া মৌজায় উচ্ছেদ অভিযান চলে। বিহারিয়া মৌজার একাংশেও কাজ হয়। ওই এলাকায় নানা বসতবাড়ি, দোকান, বাণিজ্যিক ভবনও রয়েছে।
গত মাসে জ্যোতিপল্লি এলাকায় উচ্ছেদের কাজে বাধা এসেছিল। ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না-পাওয়া, যতটা জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি জমি নিয়ে নেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ তুলে প্রথমে নোটিস নিতে অস্বীকার করেন স্থানীয় জমিদাতাদের একাংশ। পরে বড় বাহিনী নিয়ে গিয়ে উদয়পুর, শুকপুকুরিয়া, বেলগড়িয়া ও বিহারিয়া মৌজায় নোটিশ ধরায় প্রশাসন। জমি চিহ্নিতকরণের কাজও হয়। কিন্তু গত ২২ জানুয়ারি উচ্ছেদের কাজ শুরু হলে ফের বাধা আসে। সেই সময়ে ফিরে যেতে হয় প্রশাসনকে।
গত ২৩ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানার দিগনগরে উচ্ছেদের কাজ সারা হয়। খবর পেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা থেকে গাড়িতে নদিয়ার দিগনগরের দিকে রওনা দিয়েছিলেন অনগ্রসর জনজাগরণী মঞ্চের নেতারা। শান্তিপুর থানার পুলিশ তাঁদের আটক করে। রাতে মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরে আর দিগনগরে জমিদাতাদের তরফে কোনও বাধা আসেনি। এ দিন ফুলিয়াতেও এল না।
সৈয়দ গ্রেফতার হওয়ার পরেই, ক’দিন আগে রানাঘাটে মহকুমাশাসক দফতরে জমিদাতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রশাসনিক কর্তারা। পরে শান্তিপুর ব্লক অফিসেও শুনানি হয়। উচ্ছেদের নোটিস পাওয়ার পরেই অবশ্য অনেকে নিজেরাই অধিগৃহীত জমিতে থাকা নিজের বাড়ি বা দোকান ভাঙার কাজ শুরু করেছিলেন। কেউ আবার দিন কয়েক সময় চান।
দুপুরে নিজের ভাঙা বাড়ির সামনে বসেছিলেন বছর পঁচাত্তরের কমলা পল্লে। তিনি বলেন, “কয়েক দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। আগে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছি। অসুস্থ থাকায় বাড়ি থেকে সব সরাতে পারিনি। ওঁদের বললাম, দু’দিন সময় দিন। কিন্তু ওঁরা শুনলেন না। সব ভেঙে দিলেন।” বেলেমাঠ এলাকার সুশীল ঘোষ বলেন, “ক্ষতিপূরণের যে টাকা পেয়েছি। আমাদের প্রাপ্য আরও বেশি। তবু আমরাই সরিয়ে নিতাম। ওঁরা ভেঙে দিয়েছেন।” শিল্পী পরিমল পালের স্টুডিয়ো আছে এই এলাকায়। তিনিও বলেন, “ক্ষতিপূরণের অঙ্কের তুলনায় আমার জমি বেশি গিয়েছে। তা জানিয়েছি প্রশাসনকে। আর যা ছিল, আমি সরিয়ে নিয়েছি।”
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এর আগে একাধিক বার জমিদাতাদের নির্মাণ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “ওঁদের আগেই নোটিস দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই আগে সরে গিয়েছেন। এ দিন কোনও সমস্যা হয়নি।”