পর্যটকশূন্য: গৌরাঙ্গের জন্মস্থান।
এই তো কিছু দিন আগেই ভিড়ে থিকথিক করছিল মঠমন্দির। সে কত দেশের মানুষ, তাদের কত শত ভাষার হুল্লোর।
কিন্তু এই বৈশাখী দিনে সে সব কোথায় কী! নাটমন্দিরগুলোয় বিরাজ করছে গভীর শূন্যতা। অতিথিশালার টানা বারন্দা খাঁ খাঁ করছে। যাত্রিহীন বুকিং অফিসে নিশ্চিন্তে বসে হরিনামের মালা জপে যাচ্ছেন কর্তব্যরত সেবক।
নবদ্বীপ কিংবা মায়াপুরের বেশির ভাগ মঠমন্দিরে ছবিটা এখন এমনই। এই গরমে তীর্থে মন নেই পর্যটকদের। দার্জিলিং, গ্যাংটক বা সিকিমের পাহাড়ি ঠান্ডা অনেক বেশি টানছে তাঁদের। এমনিতেই বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য নবদ্বীপ বা মায়াপুরের ক্ষেত্রে কিছুটা অব-সিজন বলেই ধরা হয়। বৈশাখী পূর্ণিমায় ফুলদোল ও চন্দনযাত্রা ছাড়া তেমন কোনও বড় উৎসব-অনুষ্ঠান এই সময়ে নেই। ফলে পর্যটকের উপস্থিতি তিন ভাগের এক ভাগে ঠেকেছে।
যদিও পালা-পার্বণের শহর নবদ্বীপের সঙ্গে উৎসবের সম্পর্কটি গভীর। সারা বছরই নবদ্বীপের নিজস্ব ক্যালেন্ডারে কোনও না কোনও উৎসব লেগেই আছে। সেই টানে সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ছুটে আসেন গঙ্গার তীরের যমজ জনপদ নবদ্বীপ-মায়াপুরে। কিন্তু বৈশাখের গরমে পর্যটনেও ভাঁটার টান।
শহরের হোটেল থেকে ধর্মশালা কার্যত ফাঁকা। মায়াপুরের ইস্কন মন্দির ছাড়া আর কোথাও পর্যটক নেই বললেই চলে। অন্য সময়ের তুলনায় ইস্কনে ভিড় বেশ হাল্কা। নবদ্বীপের জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাসের কথায়, “চন্দনযাত্রায় কিছু মানুষ এসেছিলেন। এখন বাইরের মানুষই খুব কম। ভক্তদের যাতায়াত শুরু হতে সেই রথযাত্রা।”
মায়াপুর হোটেল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপকুমার দেবনাথ বলেন, “এখন সব ফাঁকা। হোটেলে ভিড় জমতে বর্ষা পেরিয়ে সেই পুজো। রথে ভিড় হয় মঠমন্দিরে। আমাদের লাভ হয় না।” হোটেল ব্যবসায়ীদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকারের কথায়, “এই গরমে এ সব দিকে এখন আর কেউ আসতে চাইছে না। সবাই পাহাড়ে যাচ্ছেন। আসলে নবদ্বীপ-মায়াপুর হল ‘উইকএন্ড ট্যুর’। গরমের লম্বা ছুটিতে নয় এখানে ভিড় জমবে বৃষ্টি নামলে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।”