ফোনের ও প্রান্ত থেকে ভেসে এসেছিল—‘অরুণবাবু আর নেই।’
আজ থেকে দু’বছর আগে ১ এপ্রিল ভোর পাঁচটা নাগাদ খবরটা পেয়ে তড়িঘড়ি কলকাতা থেকে নবদ্বীপের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন সিপিএম নেতা অরুণ নন্দীর কাকা বিশ্বনাথ নন্দী। ট্রেনে আসার পথে নানা ভাবে তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। একবার তাঁর মনে হয়েছিল যে, ‘এপ্রিল ফুল’ করার জন্য অরুণবাবু নিজে এ ভাবে মজা করে তাঁর ভাড়াটেকে দিয়ে ফোন করাননি তো? কিন্তু নবদ্বীপের ওলাদেবী তলার বাড়িতে গিয়ে বিশ্বনাথবাবু দেখেন, বিছানায় পড়ে রয়েছে অরুণবাবুর নিথর দেহ।
মঙ্গলবার সকালে কলকাতায় বসে আনন্দবাজার পত্রিকায় অরুণবাবুর খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের চার্জশিট দেওয়ার খবর পড়ে সে দিনের অনেক কথা বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী বিশ্বনাথবাবু। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘৃণ্য অপরাধ যে বা যারাই করুক আমি তাদের শাস্তি চাই।’’ বিশ্বনাথবাবু জানান, খুন হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও ফোন করে তাঁর শরীরের খবর নিয়েছিলেন অরুণ নন্দী। ৩১ মার্চ রাতে সেটাই ছিল তাঁর শেষ টেলিফোন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “ফোন রাখার সময়ে অরুণ বলেছিল, খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যাবে। ভোর পাঁচটা নাগাদ অরুণের বাড়ির ভাড়াটে আমায় ফোন করে জানায় যে, অরুণ আর নেই। সে খুন হয়ে গিয়েছে।’’
বিশ্বনাথবাবু সাফ জানান, ডাকাতির গল্প তাঁর কোনওদিন বিশ্বাস হয়নি। পুলিশকেও তিনি সে কথা জানিয়েছিলেন। অরুণবাবুর খুনের ঘটনা নিয়ে তাঁরও সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তিনি কিছু বলতে পারেননি। ‘‘বলতে পারতেন আমার বৌদি, ছবিদেবী। কিন্তু তাঁকেও এমন ভয় দেখানো হয়েছিল যে তিনিও সেই সময় মুখ কউলতে পারেননি। তবে আজ সবই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এখন কেবল বিচারের অপেক্ষায় আছি।”
চার্জশিট প্রসঙ্গে এ দিন এলাকার মানুষের আলোচনায় বারে বারে উঠে এসেছে অরুণবাবুর খুন হওয়ার কথা। এমনকী পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে এলাকার সিপিএম কর্মীরাও দলের নবদ্বীপ ১ নম্বর শাখা কমিটির সম্পাদক এবং জনসংযোগে দক্ষ অরুণবাবুর অনুপস্থিতির কথা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন।