শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গণেশ রবিদাসের দেহ। নিজস্ব চিত্র
জাতের অনুশাসন মুছে দেয় মৃত্যু। ধর্মের চোখ রাঙানি চুপ করে এসে বসে পায়ের কাছে। কবিতায় যা সম্ভব কখনও তা বাস্তবের উঠোনেও পা রাখে বুঝি! না হলে অরাঙ্গাবাদের প্রান্তিক পাড়ায় ভিন্্ ধর্মের মানুষের কাঁধেই সব আচার মেনে দাহ হয় গণেশ রবিদাসের দেহ? দেশ জুড়ে ধর্মীয় হানাহানির আবহে তাই স্বতন্ত্র পরিচয় পেয়ে যায় অরাঙ্গাবাদের মোমিনপাড়া।
হঠাৎই বুকে ব্যথা। তার পরেই মৃত্যু। গণেশ রবিদাসের (৪২) মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর মুসলিম পড়শিরাই সোমবার ভেঙে পড়লেন মোমিনপাড়ার বাড়িতে। তাঁদের কাঁধেই গণেশের শেষযাত্রা।
সোমবার অরঙ্গাবাদের এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে এলাকার মানুষকে। আশপাশে যখন ধর্ম নিয়ে লড়াই চলছে, তখন মোমিনপাড়া হয়ে উঠেছে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির সর্বশেষ উজ্জ্বল নজির, যা ইদানিংকালে এ রাজ্যেও বিরলতম ঘটনা।
সুতির অরঙ্গাবাদ মোমিনপাড়া ঘনবসতি এলাকা। প্রায় দেড়শো ঘরের বাস। সকলেই সংখ্যালঘু মোমিন সম্প্রদায়ের। পেশাগত ভাবে এক সময় তাঁতের ব্যবসা করতেন তাঁরা। এখন সে পেশা থেকে সরে এসেছেন অনেকেই। এই গ্রামেই বসত করে দু’টি হিন্দু পরিবার। সোমবার সেখানেই গণেশের মৃত্যু হয়। স্ত্রী সনকা বলেন, ‘‘মৃত্যুর পরে চোখের সামনে একেবারে অন্ধকার। দাহ হবে কি করে তাই বুঝতে পারছিলাম না। আমার মুলিম পড়শিরাই যা করার করেছেন।’’ গ্রামের মসজিদের মৌলনা নুরুল ইসলামের নির্দেশে গ্রামবাসীরাই সৎকারের য়াবতীয় ব্যবস্থা করেন।
পঞ্চায়েত সদস্য মাসাদুল মোমিন বলেন, “বাড়িতে শোকের পরিবেশ। কান্নাকাটি চলছে। আমরাই সব প্রথা মেনে শ্মশান যাত্রার ব্যবস্তা করি। এটুকু না করলে আর প্রতিবেশীর পাশে থাকলাম কি করে!’’ গ্রামের মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, “বহুদিন ধরে গ্রামে আছি। এটুকু সম্প্রীতি না থাকলে চলে। মোমিন পাড়ায় আমরা একসঙ্গে এমনই মিলেমেশে আছি।’’
মোমিনপাড়া থেকে সুতি থানার দূরত্ব সামান্য। সুতির ওসি সন্দীপ সেন বলছেন, “এত দিন এত জায়গায় কর্মসূত্রে থেকেছি। এমন সম্প্রীতির নজির দেখিনি।’’