Communal Harmony

পূর্ণিমার পাশে দাঁড়ালেন ইমরান, মাসুদ, কারানরা

পরিবারের সব দায়িত্ব তুলে নেন মাসুদেরা। মঙ্গলবার ছিল শ্রাদ্ধের কাজ। আগের দিন ক্ষৌরকর্ম করে মস্তক মুণ্ডন করেছে দুই নাবালক ছেলেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লালগোলা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১৬
Share:

চলছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র

জাত, ধর্মের চেয়ে বড় হয়ে উঠল মানবিকতা। ভূষণ মণ্ডলের অকালমৃত্যুতে দিশেহারা স্ত্রী পূর্ণিমার পাশে দাঁড়ালেন ইমরান, মাসুদ, কারান, সফিকুল, ইমদাদুলেরা। মঙ্গলবার লালগোলার বিরামপুরে সকাল থেকে ভূষণের বাড়িতেই হিন্দু ধর্মীয় মতে শ্রাদ্ধ থেকে শুরু করে শ্মশানযাত্রী ও প্রতিবেশীদের খাওয়ানোর আয়োজন ও বিকেলে নাম সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে ইমরান, মাসুদেরাই শেষ করলেন সব কাজ।

Advertisement

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য ইমরান, মাসুদেরা। লালগোলায় মূলত রক্তদান সহ নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ইমরানণদের ওই সংস্থা। কিন্তু এ ভাবে কোনও মৃতের শেষ ক্রিয়া সম্পাদনের কথা ভাবেননি কখনও।

ইমরাণ বলেন, ‘‘বছর ৩৫ বয়সের ভূষণ অসুস্থ ছিলেন। বাড়িতে মানুষ বলতে দুই নাবালক পুত্র আর স্ত্রী। বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করে তাঁদের ছেড়ে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। একটি ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ করতেন ভূষণ। ১৮ নভেম্বর হঠাৎই মৃত্যু হয় তাঁর। পাড়া প্রতিবেশীরা দাহকার্য করলেও শ্রাদ্ধাদি করার সামর্থ্য ছিল না তাঁদের। গ্রাম থেকেই এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে এই দুর্দশার কথা জানতে পারি। এরপরই বিরামপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখি খড়ের চালার একটি ফুটোফাটা ঘর। ওবেলা কী খাবেন সে সংস্থানটুকুও নেই তাঁদের। দিনমজুর স্বামীর মৃত্যুতে সে অবস্থা আরও দুঃসহ। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম ভূষণের শেষ ক্রিয়া হিন্দু মতে স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই করা হবে, দায়িত্ব নেব আমরা।’’

Advertisement

সে দিন থেকেই পরিবারের সব দায়িত্ব তুলে নেন মাসুদেরা। মঙ্গলবার ছিল শ্রাদ্ধের কাজ। আগের দিন ক্ষৌরকর্ম করে মস্তক মুণ্ডন করেছে দুই নাবালক ছেলেই। মাসুদ, কারান, সফিকুল, ইমদাদুলেরা বেরিয়েছেন বাজার করতে। চুন থেকে পান যা যা প্রয়োজন ফর্দ মতো কেনাকাটা করে দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন যে যার মতো।

মঙ্গলবার আয়োজন করেছেন শ্রাদ্ধের।

পূর্ণিমা বলছেন, ‘‘বাড়িতে কিছুই নেই। এ সব ধর্মীয় রীতি মানার সামর্থ্য ছিল না আমার। পাড়ার সকলেই খাটি খাই। তাই ইমরানরা পাশে দাঁড়ানোয় এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে। ঈশ্বর ওঁদের মঙ্গল করুন এই শুভ কামনা জানানো ছাড়া আমার প্রতিদান দেওয়ার মতো কিছুই যে নেই। একা রেখে মানুষটাও চলে গেল।’’

যাওয়ার আগে ইমরানরা পূর্ণিমাকে বলে গিয়েছেন, যে কোনও প্রয়োজনে ভাইদের যেন তিনি ডাকেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement