শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, গাছের নীচে এ ভাবেই চলে পঠনপাঠন। মুরুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কখন স্কুল ছুটি হবে তা জানা নেই কারোরই!
চড়া রোদ বা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলে ছুটি হয়ে যায় মুরুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। হবে না-ই বা কেন? পড়াশোনার সবটাই চলে যে গাছতলায়। তাই একটু রোদ উঠলে বা আকাশ কালো করে মেঘ ঘনিয়ে এলে পিঠে ব্যাগ নিয়ে দে দৌড়! এক-দু’দিন নয়, প্রায় দশ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে মুরুটিয়া- বালিয়াডাঙা রাস্তার পাশে অবস্থিত প্রাথমিক স্কুলটি।
শিক্ষার অধিকার আইন লাগু হওয়ার পরেও এমন অবস্থা কেন?
করিমপুর পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কাজলকুমার ভৌমিক সদুত্তর না দিয়ে জানান, অতিরিক্ত শ্রেণি কক্ষ তৈরির টাকা পাওয়া গেলেও জমির অভাবে নতুন স্কুল ভবন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় মিশনারি জমি স্কুলকে দেওয়ার কথা জানতে পেরেছি। সেই জমি পেলে শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।’’
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯৪০ সালে তিনটি পাকা ঘর নিয়ে শুরু হয় স্কুল। সেই শুরু সেই শেষ। তারপর থেকে এক দিনও স্কুল-ভবন সংস্কার হয়নি। ফলে ঘরগুলি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলছে ছাদ। যে কোনও সময়ে চাঙড় ভেঙে বিপদ ঘটতে পারে। ফলে সেখানে ক্লাস করানো হয় না। একটি ছো়ট অফিস ঘর ছাড়া বাকি ঘরগুলি তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুল ভবন লাগোয়া কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বসে স্কুল। সেই ব্যবস্থাই চলে আসছে দিনের পর দিন।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সব জেনেও ঘরগুলি সংস্কার বা নতুন ঘর তৈরির জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা সংখ্যা ১৫১ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৭ জন। স্কুলের শিক্ষিকা শিপ্রা পাল জানান, “বৃষ্টিতে কোনও পড়ুয়া স্কুলে আসে না। আমরা স্কুলে গিয়ে সই করে বাড়ি ফিরে যাই।’’ তিনি জানান, শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট পাঁচটি ক্লাসের পড়ুয়ারা এক গাছের নীচে গাদাগাদি করে বসে। চিৎকারে কারও কথা কেউ শুনতে পায় না। অদূরে সড়ক দিয়ে যানবাহন দ্রুত গতিতে চলাচল করে। পাঁচিল না থাকায় যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। খোলা আকাশের নীচেই মিড ডে মিলের খাবার খায় পড়ুয়ারা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও আজ অবধি কোনও সুরাহা হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা তথা অভিভাবক উজ্জ্বল দে, অভিজিৎ বিশ্বাস ও নার্গিস বিবির অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে পড়ুায়ারা গাছের নীচে ক্লাস করছে। সব জেনেও প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘সরকার তো কত জমি কিনে নতুন নতুন ভবন তৈরি করছে। অথচ একটা স্কুলের ক’টা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারছে না!’’ ‘‘আশেপাশের দু-আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে কোনও স্কুল নেই। তাই বাধ্য হয়েই ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে পাঠাতে হয়’’— বলছেন অভিভাবকেরা।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সোনালি খাতুন ও তুরকিনা খাতুনের কথায়, “গাছতলায় বসার জন্য প্রতিদিন বইয়ের সঙ্গে আসন নিয়ে আসি। স্কুলে এক জায়গায় সবাই ক্লাস করতে খুব অসুবিধা হয়।”