মুর্শিদাবাদে টহল দিচ্ছে যৌথবাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
দোকানপাট খুলছে। বাজার বসছে। মানুষজনও রাস্তায় চলাচল শুরু করেছেন। গত কয়েক দিনের অশান্তির ছবি পাল্টাতে শুরু করছে মুর্শিদাবাদে। চেনা ছন্দে ফিরছে জেলা। অশান্তির আবহে যাতে ভুয়ো এবং উস্কানিমূলক বার্তা ছড়াতে না পারে, সেই কারণে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার একটা বড় অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই সমশেরগঞ্জ বাদে জেলার বাকি অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়েছে। তবে এখনই ১৬৩ ধারা উঠছে না। আপাতত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৬৩ ধারা বলবৎ থাকবে।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের একটি অংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আগাম সতর্কতা হিসাবে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার ছ’টিরও বেশি থানা এলাকায় যৌথবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। টহল দিচ্ছে বিএসএফ এবং পুলিশবাহিনী। ন্যূনতম অশান্তির খবরেও কড়া পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, আতঙ্কিত এলাকাবাসীদের মনের জোর বৃদ্ধি করতে আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অশান্তির কারণে ঘরছাড়ারাও পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে ঘরে ফিরছেন। দোকানপাট, বাজার যেমন খুলছে, তেমনই রাস্তাঘাটে যান চলাচলও শুরু হয়েছে।
অশান্তির খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শনিবার রাতেই মুর্শিদাবাদ চলে যান রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। এ ছাড়াও, বিভিন্ন জেলা থেকে ‘দক্ষ’ ২৩ জন পুলিশ আধিকারিককেও পাঠানো হয় সেখানে। পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখেন ডিজি। ঘুরে দেখেন হিংসাকবলিত এলাকা। দফায় দফায় পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কথা বলেন বিএসএফের সঙ্গেও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ার পরই মঙ্গলবার তিনি মুর্শিদাবাদ ছেড়েছেন। কলকাতায় ফিরেছেন বিএসএফের শীর্ষকর্তাও। পরিস্থিতির উপরে কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুতি এবং ধুলিয়ান এলাকা অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে। নতুন করে হিংসার খবর না থাকায় শিথিল হয়েছে সরকারি বিধিনিষেধ। তবে শমসেরগঞ্জ থানা এলাকার বেশ কিছু জায়গায় অশান্তির আশঙ্কা থাকায় এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মোট ১৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে হিংসাকবলিত এলাকা। জঙ্গিপুর মহকুমা সংলগ্ন নবগ্রাম এবং লালগোলা থানা এলাকায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। বেলডাঙা, শক্তিপুর, রেজিনগর, কান্দি এবং নওদা এলাকায় বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত বিক্ষোভকারীদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার আনন্দ রায় জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। নতুন করে কোথাও কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। ঘরছাড়ারা আবার নিজের ঘরে ফিরছেন। আগামী শুক্রবারের মধ্যে সব ঘরছাড়াকে ফিরিয়ে আনা হবে।