প্রতীকী ছবি।
পথের বাঁকে বাঁকে মৃত্যুর ফাঁদ, তবু সচেতনতার নাম নেই। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের অনেকেরই রাতে বা ভোরে যানবাহনে বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতা এমনই। কেউ বলছেন, রাতে বা ভোরে রাস্তা তুলনামূলক ভাবে ফাঁকা থাকায় অনেক চালকই অতি দ্রুত গতিতে চালান। কিন্তু কুয়াশায় দৃশ্যমানতা কমে যায়। অনেক সময় মাত্র হাত পনেরো বা বিশ ফুট দূরে কোনও বাঁক বা অন্য গাড়ি রয়েছে কি না, বোঝা যায় না। কিন্তু কোনও গাড়ির ‘ফগ লাইট’ নেই, কোনও গাড়ির পিছনের আলো জ্বলে না, কোনও গাড়ির চালক শীতে ঘুমে ঢুলে পড়েন। তাই হঠাৎ সামনে বাধা এলে অনেক চালকই আচমকা ব্রেক কষেন। তাতে যথেষ্ট বিপদের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বিপদ হয় গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে।
এই সমস্যা কাটানোর দাওয়াই কী?
জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, শীতের ঘুমঘুম ভাব কাটাতে পুলিশের পক্ষ থেকে চালকদের রাতে বা ভোরে চা-জল খাওয়ানো হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় গাড়ি ধীর গতিতে চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলছেন, ‘‘চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। নাকা চেকিং করা হচ্ছে। আইন ভেঙে যাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
অনেক চালক মদ্যপান করে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেন, এমন অভিযোগও রয়েছে। পুলিশের দাবি, বিভিন্ন রাস্তায় চালকদের শ্বাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল কুমার সাহা বলছেন, ‘‘আমরা বাসের চালকদের এ বিষয়ে সচেতন করেছি। ভোরের দিকে কুয়াশা থাকলে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেও বলা হয়েছে। তাতে আগের থেকে দুর্ঘটনা কমেছে।’’
মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলছেন, ‘‘গাড়িগুলিতে ফগ লাইট চালু রাখার কথা বলা হয়েছে, ঘন কুয়াশা পড়লে মূল রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করতে হবে, দূরপাল্লার যাত্রিবাহী বাসে সহকারী চালক রাখতে হবে। শীতের রাতে চা-জল দেওয়া হলে খুবই ভাল হয়।’’ তবে তাতেও কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে চিন্তা কাটেনি।
বাইশ বছর আগের পথ দুর্ঘটনার ক্ষত যে কারণে এখনও দগদগ করছে। সে দিন লালবাগে পিকনিক করে করিমপুর ফেরার পথে একটি বাস কুয়াশায় পথ হারিয়ে জলঙ্গির পদ্মায় পড়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ৫৭ জনের। ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি দৌলতাবাদের বালিরঘাটে সেতুর রেলিং ভেঙে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, লাগাতার ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচিও করা হয়েছে। জেলা জুড়ে ট্রাফিক আইন যাঁরা ভাঙছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাতেই গত কয়েক বছরে দুর্ঘটনা কমেছে।
কিন্তু অনেক গাড়িরই যে কুয়াশার জন্য আবশ্যিক ‘ফগ লাইট’ থাকে না, তা অনেকেই স্বীকার করছেন। কিছু গাড়ির পিছনের লাল আলো জ্বলে না। তাই গাড়িটি আচমকা গতি কমালে পিছনের গাড়ির চালক তা বুঝতে পারেন না। তাতেও দুর্ঘটনা হয়।