কাজ ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ। শুক্রবার বীরনগরে। নিজস্ব চিত্র
বিপুল সংখ্যক অস্থায়ী কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে তালা পড়ল বীরনগর পুরসভার গেটে।
পুরসভা সূত্রের খবর, পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধের কাজের জন্য সেখানে ৮৪ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করার কথা। তাদেরই মজুরি দেবে রাজ্য সরকার। কিন্তু বাড়তে-বাড়তে সংখ্যাটি পাঁচশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই অতিরিক্ত কর্মীর ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে ৪২০ জনকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। তার জেরেই শুক্রবার পুরসভায় বিক্ষোভ দেখালেন ওই কর্মীদের একাংশ। একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপালেন তৃণমূলের পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান।
রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থার (সুডা) তরফে ফেব্রুয়ারি-তে পুরসভাগুলিকে পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ হতে বলা হয়। কিছু স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের দিয়ে বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা করানো হয়। নর্দমা-জঞ্জাল সাফাই ইত্যাদি কাজের জন্য ৮৪ জনকে অস্থায়ী ভাবে কাজে নেওয়ার কথা বলা হয়। স্থির হয়, পুর দফতর তাঁদের দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরি দেবে।
এর মধ্যে বীরনগরের পুরপ্রধান বদল হয়। স্বপন দাসকে সরিয়ে ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফিরিয়ে আনা হয় গত মার্চে। এপ্রিলে স্থির হয়, অস্থায়ী পদে কর্মী নিতে কাউন্সিলরেরা নাম জমা দেবেন। কিন্তু কর্মীর সংখ্যা প্রতি মাসে বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৫০৪। এঁদের কোনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। কিন্তু এই সব কর্মীকেই পুরসভা দিনে ২০০ টাকা মজুরি দেয়। এই অতিরিক্ত ৫০ টাকা এবং ৪২০ জনের অতিরিক্ত মজুরি বাবদ মাসে ২৬ লক্ষ টাকারও বেশি যাচ্ছে পুরসভার তহবিল থেকে। গত ২৫ অগস্ট কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ৮৪ জনকেই রাখা হবে। বাকিরা ছাঁটাই হবেন।
কিন্তু এত কর্মী ঢুকল কী ভাবে? আন্দোলনে নামা অমিত কুণ্ডু, শুভ পাল, প্রতাপ সরকারদের আক্ষপ, ‘‘যে যার ইচ্ছে মতো লোক ঢুকিয়েছে। আমরা তো কাজটা করে এসেছি। কিন্তু রোজ নতুন-নতুন লোক নেওয়া হয়েছে, যারা অনেকেই কোনও কাজ করত না। এখন ছাঁটাই করলে আমরা কোথায় যাব?” এই নিয়ে আগেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
উপপুরপ্রধানই লাগাতার লোক ঢুকিয়েছেন দাবি করে পুরপ্রধান বলেন, “আমি আগে খেয়াল করিনি। এখন আমরা স্থির করেছি, ৯০ জন থাকবেন। বাড়তি ছ’জনের মজুরি আমরা নিজস্ব তহবিল থেকে দেব।’’ উপপুরধান গোবিন্দ পোদ্দার পাল্টা বলেন, “এতগুলো লোকের মজুরির টাকা দিচ্ছে পুরসভা, সেটা পুরপ্রধান এত দিন জানতেন না! আমি কাউকে নিয়োগ করিনি। পুরপ্রধানকে বাদ দিয়ে কিছুই করা সম্ভব নয়।”
চারশোরও বেশি অস্থায়ী কর্মীর ভবিতব্য নিয়েই টানাপড়েন চলছে।