—ফাইল চিত্র
সকালে ঘেমে-নেয়ে সদ্য বাজার থেকে ফিরেছেন ভবেশ বিশ্বাস। পকেটে রাখা মোবাইল বেজে উঠতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোন ধরলেন।
ফোন ধরতেই ভেসে এল —“নমস্কার, আমি অজয় দে চেয়ারম্যান শান্তিপুর পুরসভা বলছি।” প্রথমে অবাক। পুরপ্রধান কেন তাঁকে ফোন করতে যাবেন! কিন্তু কোনও উত্তর দেওয়ার আগেই ও পারের কণ্ঠ বলে চলেছে পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে কী করতে হবে। বলে চলেছে প্লাস্টিক বর্জন থেকে ডেঙ্গি প্রতিরোধ, জল অপচয় রোধ, বৃক্ষরোপণের কথাও। শান্তিপুরের নাগরিক হিসাবে শহরকে সুন্দর ও সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পড়ে হাফ ছাড়লেন বছর পঞ্চাশের ভবেশ। পরে খোঁজখবর নিয়ে শোনেন, আরও অনেকেই এমন ফোন পেয়েছেন। ২৬ সেকেন্ডের এই ‘অডিও মেসেজ’ পৌঁছে যাচ্ছে শহরবাসীর মোবাইলে। এর আগে নির্বাচনের প্রচারে মোদী-মমতার গলা শুনেছেন অনেকেই। কিন্তু নাগরিক কারণে এ হেন উদ্যোগ কমই হয়েছে।
লক্ষ্য: পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা
• জাতীয় নগর জীবিকা মিশন প্রকল্পে এবং স্টেট আরবান ডেভলপমেন্ট এজেন্সির সহায়তায় পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার কাজ করার উদ্যোগ। তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
• সচেতন করতে পথনাটিকা থেকে বসে আঁকো, আলোচনা সভা যেমন হচ্ছে তেমনই নাগরিকদের কাছে ফোনকলেও এই বার্তা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
• পুরসভার তরফে নাগরিকদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়।
• পুরসভার তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ প্রাথমিক ভাবে উদ্যোগী হয়। রেকর্ডিং করা হয় পুরপ্রধানের বার্তা।
• সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে একটি ফোন নম্বর নেওয়া হয়। সেই নম্বর থেকেই পৌঁছে যাচ্ছে ২৬ সেকেন্ডের অডিও মেসেজ সম্বলিত ফোন কল।
• ব্যয় হয়েছে প্রায় সাত হাজার টাকা। পরে পাঠানো হবে এসএমএস।
শান্তিপুরের দীর্ঘদিনের পুরপ্রধান অজয় দে বলেন, “বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরসভার তরফে আমরা নাগরিকদের ফোন করেও অনুরোধ জানাচ্ছি।” খোদ পুরপ্রধানের কাছ থেকে ফোন যাওয়ায় নাগরিকেরা তা গুরুত্ব দিয়েই দেখবেন বলে আশাবাদী পুর কর্তৃপক্ষ।
শান্তিপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের জনগণনা অনুযায়ী শহরের ২৪টি ওয়ার্ড মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজারের মতো। এই কয়েক বছরে তা আরও কিছুটা বেড়েছে। জাতীয় নগর জীবিকা মিশন প্রকল্পে এবং স্টেট আরবান ডেভলপমেন্ট এজেন্সির সহায়তায় বিভিন্ন শহরে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পরিবেশরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হওয়ার কথা বলা হয়। এর জন্য আলাদা অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। সেই প্রকল্পেই নাগরিকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে পুরপ্রধানের বার্তা।
পুরসভা সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন শহরের বিভিন্ন বাড়িতে রুটিন ভিজিটে যান, সেই সময়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। তার মধ্যে তাঁদের মোবাইল নম্বরও থাকে। পুরসভার তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাহায্যে পুরপ্রধানের বার্তা রেকর্ড করা হয়।
এর পরে পুরসভার তরফে যোগাযোগ করা হয় বেসরকারি সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যারা এই ধরনের ‘ফোন কল’ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকে। তাদের সাহায্য নিয়ে একটি ফোন নম্বর থেকে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রায় সাত হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে শুধু ফোনই নয়, আগামী দিনে শহরবাসীর কাছে এই বার্তা নিয়ে এসএমএস-ও পৌঁছনো হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
পন্থা ভাল। কতটা কাজ হয়, সেটাই এখন দেখার।