সেল: ক্রেতার অপেক্ষায় সার দিয়ে সাজানো বাইক। —নিজস্ব চিত্র।
সেল... সেল... সেল...
পিচবোর্ডের উপরে সাঁটানো সাদা কাগজে শুধু এই লেখাটাই যা ছিল না। বাকিটুকু, আড়ে-বহরে-ভিড়ে-চিৎকারে পুরোদস্তুর চৈত্রের সেল।
বৃহস্পতিবার থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছিল শো-রুমগুলিতে। শুক্রবার সে ভিড় উপচে পড়ল। গিজগিজে সেই ভিড়ে ঘেমে নেয়ে বাইক কেনার ধুম ও লোকজনের ধৈর্য দেখে বাইক বিক্রেতাদের অনেকেই এ দিন বলেছেন, ‘‘এতটা কিন্তু আমরাও আশা করিনি।’’
আর ক্রেতারা বলছেন, ‘‘কী বলছেন মশাই! নতুন বাইকে বাইশ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড়! কোনও দিন ভাবতে পেরেছেন? দরকার হলে রাতভর অপেক্ষা করব। এমন সুযোগ বারবার আসে নাকি!’’
কিন্তু মাঝ চৈত্রে বাইক-বাজারেও এমন বসন্তের হাওয়া কেন?
শো-রুমের মালিকেরা জানাচ্ছেন, কোনও হাওয়া-টাওয়া নয়, পরিবেশ দূষণ রুখতে আজ, ১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে ভারত স্টেজ ৩ (বিএস-৩) গাড়ির বিক্রি ও রেজিস্ট্রেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই কারণেই ‘স্টক’ খালি করতে শুক্রবার পর্যন্ত বাইক বিক্রিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
মডেল অনুযায়ী নতুন বাইক কেনার ক্ষেত্রে ছাড় মিলেছে গড়ে পাঁচ থেকে বাইশ হাজার টাকা পর্যন্ত। বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, করিমপুরে এই ছাড়ের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল মুখে মুখে। তার পরে কেউ আর দেরি করেননি। কৃষ্ণনগরে যেমন এ দিন সকালে শো-রুমে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন সাত বন্ধু। গাড়ি পিছু ১৫ হাজার টাকা করে ছাড় পাওয়ায় সাত জনেই একই মডেলের একই রঙের গাড়ি কিনেছেন।
তাঁদেরই একজন অরূপ বিশ্বাস বলেন, “এমন সুযোগ তো বার বার আসবে না। তাই বৃহস্পতিবার রাতে চায়ের আড্ডায় সবাই মিলে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম।’’ কৃষ্ণনগরের একটি শো-রুমের জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার রায় বলেন, ‘‘বিএস-৩ বাইক আর আমাদের কাছে নেই। পরে যাঁরা এসেছেন তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।’’
বহরমপুরের বেসরকারি সংস্থার কর্মী অরূপ দেবনাথ বলছেন, ‘‘অন্য সময় তো বাইকের সঙ্গে হেলমেটটাও ফ্রি দেয় না। এখন ১০ হাজার টাকা ছাড় দিচ্ছে শুনে নতুন বাইক না কিনে পারলাম না।
করিমপুরের একটি শো-রুমের মালিক রণেন্দু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘৩০ মার্চ সকালে কোম্পানি থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল, বাইকের দামের উপর ছাড় দিয়ে শুক্রবারের মধ্যে বিএইচ-৩ বাইক বিক্রি করতে হবে। সেই মতো এ দিন সকালে প্রায় তিন ঘণ্টার মধ্যে শোরুমে মজুত থাকা ৩৮টি বাইক বিক্রি করেছি।’’
বাইকের পাশাপাশি স্কুটিও বিক্রি হয়েছে ভালই। বহরমপুরের এক শো-রুমের মালিক হিমাদ্রী দাস বলেন, ‘‘দু’দিনে সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০ স্কুটি ও বাইক বিক্রি হয়েছে।’’