হাসপাতালে মহাদ্দেস। —নিজস্ব চিত্র।
ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছে মা। ক্ষতবিক্ষত বছর তিনেকের শিশুটি সেই অবস্থাতেও মাকে জড়িয়ে ধরে নাগাড়ে কেঁদে চলেছে। সোমবার সকালে রেজিনগর স্টেশন থেকে সামান্য দূরে ওই শিশুটির কান্না শুনে খেতের কাজ ফেলে ছুটে আসেন রেজিনগরের উত্তরপাড়ার মহাদ্দেস শেখ। মহাদ্দেস ও তাঁর স্থানীয় দুই বন্ধু শিশুটিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ট্রেনের চাকায় থেঁতলে যাওয়ায় ওই শিশুর দু’টি পা বাদ দিতে হয়েছে।’’
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই মহিলার নাম দিপালী মণ্ডল (২৮)। বাড়ি নওদা ব্লকের সর্বাঙ্গপুর গ্রামে। বুধবার সকালে শিয়ালদহগামী মেমু ট্রেন রেজিনগর স্টেশন ছাড়ার পরেই ওই মহিলা কাটা পড়েন বলে রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বহরমপুর জিআরপি থানার ওসি সমীর ঘোষ বলেন, “আত্মহত্যা করার জন্য ওই মহিলা ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। ওই মহিলার কোলে তাঁর তিন বছরের শিশুপুত্র ছিল। ভাগ্যের জোরে শিশুপুত্রটি প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। ওই ঘটনার তদন্ত চলছে।”
এই ঘটনার পরে মহিলা ও তার শিশুপুত্রের পরিচয় জানা যায়নি। ফলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের খাতায় ওই শিশুকে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ বলে উল্লেখ রয়েছে। একই ভাবে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ বলে বহরমপুর পুলিশ মর্গে রাখা হয় মহিলার মৃতদেহ। এ দিন সন্ধ্যার পরে ওই মহিলার নাম ও ঠিকানা-সহ বিস্তারিত তথ্য পরিবারের সদস্যরা রেল পুলিশের কাছে জমা দেন।
মহাদ্দেস জানান, রেল লাইনের উপরে ওই মহিলার শরীরের একটা অংশ এবং রেল লাইনের ধারে শরীরের বাকি অংশ পড়ে রয়েছে। ওই অবস্থায় মাকে জড়িয়ে ধরে ওই শিশুটি কাঁদছিল। সঙ্গে সঙ্গে গামছায় জড়িয়ে কোলে তুলে নিয়ে তিনি ছুটে যান স্টেশন মাস্টারের কাছে। তত ক্ষণে খবর পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে স্টেশনে চলে আসেন মহাদ্দেসের স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী বন্ধু কয়েস শেখ ও খোশ মহম্মদ। সেখান থেকে রেজিনগর থানায় গোটা বিষয়টি জানিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তির বন্দোবস্ত করেন তাঁরা।
মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় শিশু বিভাগে রাখা হয়েছে ওই শিশুটিকে। মাথার কাছে বসে মহাদ্দেশ পরম যত্নে ছোট্ট ওই শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে ওই দু’জন ব্যবসায়ী। শিশুটির রক্ত লাগবে শুনে তিন জনেই ছুটলেন জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দেওয়ার জন্য। কিন্তু শিশুটির রক্তের গ্রুপের সঙ্গে তাঁদের রক্তের গ্রুপের মিল না হওয়ায় কিছুক্ষণের জন্য তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। পরে অবশ্য ‘এ’ গ্রুপের এক বোতল রক্ত জোগাড় করেন তাঁরা।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিপালীদেবীর বাবার বাড়ি বেলডাঙার বাঁশচাতোর এলাকায়। প্রায় সাত বছর আগে নওদার সর্বাঙ্গপুরের তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী সুজয়বাবু পেশায় সম্পন্ন কৃষক। দিপালীদেবীর দুটি সন্তান। সর্বাঙ্গপুর পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের অসিত মণ্ডল বলেন, ‘‘পারিবারিক অশান্তির কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। রবিবার রাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। বছর তিনিকের ছোট ছেলেটিকে এ দিন সকালে বেলডাঙায় ডাক্তার দেখানোর নাম করে বাড়ি থেকে বের হন ওই মহিলা। তারপরেই ওই ঘটনার কথা জানতে পারি।”