তখন বিক্ষোভ চলছে। শনিবার জঙ্গিপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে সদ্য কাজে যোগ দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতাল পুলিশি ঘেরাটোপে। কোথাও আবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নোডাল অফিসার হিসেবে বহাল হয়েছেন খোদ পুলিশকর্তা। সেই আবহে শনিবার ফের দেশলাই কাঠি পড়ল জঙ্গিপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে।
এ দিন এক প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাসপাতাল। রেক্সোনা খাতুন (২৫) নামে ওই প্রসূতির বাড়ি জঙ্গিপুর শহর লাগোয়া পানানগর গ্রামে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রাম থেকে হাসপাতালে প্রথমেই ছুটে আসেন তাঁর বাবা ও স্বামী। অভিযোগ, জরুরি বিভাগের গেট দিয়ে দু’জনে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চত্বরে ঢুকতেই হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী রেক্সোনার স্বামীকে মারধর করেন।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই খবর গ্রামে পৌঁছতেই শ’দেড়েক গ্রামবাসী হাসপাতালে ছুটে আসে। জনা কুড়ি নিরাপত্তাকর্মী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। খবর পেয়ে পুলিশ আসে হাসপাতালে।
এ দিকে বিক্ষোভের ফলে যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই প্রসেনজিৎ দাস-সহ বহু চিকিৎসক আটকে পড়েন হাসপাতালের মধ্যে। প্রায় তিন ঘণ্টা দেহ আটকে গোটা হাসপাতালকে কার্যত ঘিরে রাখে গ্রামের লোকজন ও প্রসূতির পরিজনেরা। পুলিশ এসে হাসপাতালের গেট ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালের বাইরেই চলে বিক্ষোভ। তাদের দাবি, অভিযুক্ত চিকিৎসককে তুলে দিতে হবে তাদের হাতে।
রেক্সোনার বাবা বরজাহান শেখ বলেন, ‘‘গত ছ’মাস ধরে ওই হাসপাতালের অন্য এক চিকিৎসকের চেম্বারে মেয়েকে দেখানো হচ্ছিল। শুক্রবার দুপুরে তাঁর কথা মতো জঙ্গিপুর হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করা হয়। রাত ৮টা নাগাদ বাড়িতে খবর দেওয়া হয়, মেয়েকে বহরমপুরে মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হচ্ছে। হাসপাতালে এসে জানতে পারি, মেয়ে পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছে।’’
বরজাহানের অভিযোগ, “তার পরে রাত ৯টা থেকে শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত চিকিৎসক মেয়েকে এক বারের জন্যও দেখতে আসেনি। শেষে ডাক্তার যখন এল তখন সব শেষ।’’
রেক্সোনার স্বামী জামিরুল ইসলামের অভিযোগ, “মৃত্যুর খবর শুনে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে মৃত্যুর কারণ জানতে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসকের খোঁজ করতেই নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের ঘিরে ধরে। এক কর্মী আমাকে মারধর শুরু করে।”
অভিযুক্ত চিকিৎসক প্রসেনজিৎ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইলও বন্ধ ছিল। সুব্রত মাঝি নামে এক চিকিৎসকের দাবি, মা ও শিশুর ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় চিকিৎসক ওই মহিলাকে বহরমপুরে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন নিয়ে যাননি। ওই চিকিৎসক ঝুঁকি নিয়েই সিজার করে সন্তান প্রসব করান। ওই চিকিৎসক বহু চেষ্টা করেও প্রসূতিকে বাঁচাতে পারেননি।
তাঁর অভিযোগ, “এর পরেই হাসপাতালে ঘণ্টা তিনেক ধরে তাণ্ডব চলে। ইট, পাটকেল নিয়ে হামলা হয়। আতঙ্কের পরিবেশে সমস্ত পরিষেবা অচল হয়ে পড়ে। চিকিৎসক এবং অন্য রোগীরাও খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।’’
হাসপাতালের সুপার সায়ন দাস বলেন, “প্রসূতির মৃত্যু হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্ত হয়। এ ক্ষেত্রেও তদন্ত করে দেখা হবে চিকিৎসকের কোনও গাফিলতি ছিল কি না। এ দিন হাসপাতালে যা হয়েছে তা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।”
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।