দাম নেই, ক্ষতির মুখে পেঁয়াজ চাষি

অধিক ফলন ও আর্ন্তদেশীয় বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণের জেরে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি অর্ধেক দামও মিলছে না। ফলে উৎপাদনের খরচই উঠছে না। এ দিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণেরও কোনও বন্দোবস্ত নেই। সব মিলিয়ে দুই জেলার কয়েক হাজার পেঁয়াজ চাষির এখন শিরে সংক্রান্তি দশা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০১:১২
Share:

চলছে পেঁয়াজ ঝাড়াই বাছাই করার কাজ। বেলডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

অধিক ফলন ও আর্ন্তদেশীয় বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণের জেরে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি অর্ধেক দামও মিলছে না। ফলে উৎপাদনের খরচই উঠছে না। এ দিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণেরও কোনও বন্দোবস্ত নেই। সব মিলিয়ে দুই জেলার কয়েক হাজার পেঁয়াজ চাষির এখন শিরে সংক্রান্তি দশা।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের ২৬টি ব্লকেই কমবেশি পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে জেলার পেঁয়াজ চাষের মানচিত্রে নওদার স্থান উপরের দিকে। জেলার উদ্যান পালন দফতরের এক কর্তা জানালেন, জেলার অর্ধেক পেঁয়াজ নওদাতে উৎপন্ন হয়। গত বছর জেলার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। পেঁয়াজ ওঠার মুখেই চাষিরা ভাল দাম পেয়েছিলেন। এপ্রিলের শেষের দিকে পাইকারি বাজারে অন্তত ১৫ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে পেঁয়াজ। লাভের মুখ দেখেছিলেন চাষিরা। ফলে এ বার চাষিরা আরও বেশি পরিমান জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। জেলার উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক গৌতম রায় জানান, এ বছর ১৩৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। কিন্তু ফসল উঠতেই চাষির কপালে চিন্তার চওড়া ভাঁজ দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজের বাজার মন্দা। বস্তা ভর্তি পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। চাষিকে তা ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ অভাবী বিক্রি করছেন।

কেন এই হাল? পেঁয়াজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, নওদার পেঁয়াজের ভাল বাজার রয়েছে পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশে। ফি বছর সীমান্ত পেরিয়ে পেঁয়াজের ট্রাক পৌঁছে যায় বাংলাদেশে। কিন্তু এ বছর নির্বাচনের কারণে সীমান্ত ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মাস তিনেক ধরে পেঁয়াজ রপ্তানী থমকে রয়েছে। এ ছাড়াও পাশের রাজ্য বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডেও মুর্শিদাবাদের পেঁয়াজ যায়। কিন্তু এ বছর ওই সমস্ত রাজ্যে পেঁয়াজের ফলন তুলনায় বেশি হয়েছে। ফলে ওই সব রাজ্যে পেঁয়াজের চাহিদা নেই। বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, শিলিগুড়ি ও কলকাতায় পেঁয়াজের বড় বাজার রয়েছে। কৃষ্ণনগরের এক ব্যবসায়ী জানালেন, এ বছর বিহারের বাজারে কোনও ট্রাক যাচ্ছে না। কারণ, সেখানেও ফলন ভাল হয়েছে।

Advertisement

এই অবস্থায় মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করে চাষিরা বেজায় বিপাকে পড়েছেন। নওদার পরেশনাথপুরের চাষি সুজয় বিশ্বাস কিংবা আমতলার চাষি সমরেশ দাস বলেন, ‘‘এক বিঘে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। বিঘা প্রতি ২০ কুইন্টাল। গতবার ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এ বার সাত টাকাতেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। চাষের খরচই উঠছে না।’’ বেলডাঙার এক চাষি জানালেন, পেঁয়াজের দামও মিলছে না। আবার পেঁয়াজ বেশিদিন রাখাও যাচ্ছে না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের নাসিকে বিশেষ প্রদ্ধতিতে বাঁশের মাচা বানিয়ে পেঁয়াজ রাখার রীতি রয়েছে। কিন্তু এখানে সে রীতি নেই। ফলে মাস খানেকের মধ্যেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘরেই পচে যাচ্ছে।

একই অবস্থা নদিয়ার চাষিদেরও।

জেলার উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭টি ব্লকেই পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে করিমপুর, তেহট্ট, কৃষ্ণগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, ধুবুলিয়া, চাকদহ এলাকায় পেঁয়াজ চাষ বেশি হয়। এ বছর ওই সব ব্লকগুলিতে বেশি পরিমান জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজের বাজারে মন্দা। ক্রেতা নেই। কৃষ্ণনগরের কুলগাছির চাষি বিনয় মণ্ডল জানালেন, গত বছর ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়ে ভালো লাভ হয়েছিল। এ বার আরও লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলেন। ২০ কুইন্টাল পেঁয়াজ হয়েছে। কিন্তু দাম মিলছে না। খরিদ্দারও কম। ফলে মাস দুয়েক ধরে পেঁয়াজ বস্তাবন্দি করে রেখেছেন। এখন পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। ওই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কাশী মণ্ডল বলেন, “বরাবর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি হয়। কিন্তু এ বার ভোটের কারণে তা হয়নি। ফলে বাজারে‌র দশা করুণ। চাষের খরচই উঠছে না।’’

করিমপুরের কাছারিপাড়ার পেঁয়াজ চাষি বিপ্লব সরকার জানালেন, পাইকারি বাজারে ৫-৭ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষের খরচই উঠবে না। আবার গরমে পেঁয়াজ ঘরে রাখাও যাচ্ছে না।

তবে মুর্শিদাবাদের উদ্যান পালন দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারত-বাংলাদেশের বানিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে। তখন চাষি আবার ভালো দাম পাবেন। ততদিনে অবশ্য অনেক চাষি অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement