মৃতের মা। নিজস্ব চিত্র।
পরপর কয়েকটি চাকরির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ঘরেই শাড়ির ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল যুবকের দেহ।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সুমন চক্রবর্তী (২৫)। বাড়ি ধুবুলিয়া থানার ৩ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকায়। পরিবারের দাবি, বার কয়েক চাকরির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর ঘর থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পেয়েছে পুলিশ। তাতেও সেই হতাশার কথাই লেখা রয়েছে। মানসিক অবসাদে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। এ দিনই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুমনের বাবা সুশান্ত চক্রবর্তী একটি ইটভাটার কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সুমন ছোট, দাদা স্কুলে পড়ান। ২০১৮ সালে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বিএ পাশ করেন সুমন। ২০২০ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে বিএড পাশ করেন। এর পর বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসেন। পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের পরীক্ষাতেও বসেছিলেন। শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় পাশ করলেও লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি। পরে আবার পুলিশে নিয়োগের পরীক্ষায় বসলেও শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষার সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবগারি দফতরে নিয়োগের পরীক্ষাতেও বসেন তিনি। সম্প্রতি ফল বেরোলে দেখা যায়, অল্পের জন্য অকৃতকার্য হয়েছেন সুমন। চাকরি না পেয়ে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাঝে সুমন একটি মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থায় এবং অন্য একটি বেসরকারি সংস্থায় অল্প কিছু দিনের জন্য কাজ করেছিলেন। দিন তিনেকের জন্য রঙ করার কাজে সাহায্যকারী হিসাবেও কাজ করেছেন। তিনি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়তে থাকলে বাড়ির লোকজন-বন্ধুবান্ধব সকলেই তাঁর মনোবল বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।
বুধবারও তিনি বাড়ির অন্যদের সঙ্গে রাতের খাবার খান। এর পরে নিজের ঘরে চলে যান। রোজ সকালে তিনি ছুটতে বেরোতেন। এ দিন সকালে তাঁর বাবা ডাকাডাকি করে সাড়া পাননি। পরে পরিবারের অন্যদের ডাকেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকে তাঁরা দেখেন, মায়ের শাড়ির ফাঁসে সুমনের দেহ ঝুলন্ত ঝুলছে। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ধুবুলিয়া থানার পুলিশ। সুমনের মেসো মাধব মুখোপাধ্যায় বলেন, “ও খুবই ভাল ছেলে ছিল। শুনেছি, চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিল। তবে এ রকম ঘটে যাবে তা ভাবা যায়নি।”