Aroop Biswas

নড়বড়ে নদিয়ায় অবস্থা ফেরাতে দায়িত্বে অরূপ

মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোট বিজেপির দিকে সরে যাওয়ায় লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ নদিয়ায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৩
Share:

নদিয়ার দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস। — ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত অনুগামী, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে নদিয়ায় সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ‘নদিয়ার অবস্থা ভাল না’ বলেও শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে নেত্রী মন্তব্য করেছেন।

Advertisement

নদিয়ায় দীর্ঘ সময়ের জন্য শেষ পর্যবেক্ষক ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষা-দুর্নীতি মামলায় তিনি আপাতত জেলে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে খুব অল্প সময়ের জন্য দায়িত্বে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে আর কেউ নদিয়ার পর্যবেক্ষক হননি। পরে ‘পর্যবেক্ষক’ পদটি তুলে দেয় তৃণমূল। তবে নেত্রী অরূপকে নদিয়া ‘দেখতে’ বলায় ফের রাজ্য স্তরের কোনও নেতা এই জেলা দলের অভিভাবক হলেন।

নদিয়ায় তৃণমূলের বস্থা যে ‘ভাল নয়’ তা গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে বার বার সামনে এসেছে। মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোট বিজেপির দিকে সরে যাওয়ায় লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ নদিয়ায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। মুর্শিদাবাদে সলাগরদিঘি কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পরে উত্তর নদিয়ার সংখ্যালঘু-প্রধান বিভিন্ন এলাকাতেও তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাগাতার গোষ্ঠী কোন্দল। প্রায় প্রতি দিন কোনও না কোনও এলাকা থেকে কোন্দলের খবর আসছে।

Advertisement

নদিয়ার জেলাসদর কৃষ্ণনগরেও তৃণমূল নেতৃত্বের দুর্বলতা স্পষ্ট। কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে জেতার পরে বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে যাওয়া মুকুল রায়ের দীর্ঘ অনুপস্থিতি সদর শহরে দুই দলকেই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। নদিয়া উত্তরে আরও যোগ হয়েছে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যর জেলে ঢোকা বা তেহ্ট্টের বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধেও ওঠা চাকরি-দুর্নীতির অভিযোগ। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়ের বিবাদও সামনে এসেছে বারবার। ও দিকে সংখ্যালঘু-প্রধান চাপড়ায় প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তথা টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে হারা জেবের শেখের অবস্থান পঞ্চায়েত ভোটে কী হতে পারে, তা-ও জেলা নেতৃত্বের কাছে বিশেষ স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে তেহট্টে দু’টি সমবায় সমিতির ভোটে সিপিএমের প্রার্থীদের সামনে প্রায় দাঁড়াতেই পারেনি তৃণমূলের লোকজন। ফলে নেত্রীর মন্তব্য শুনে নদিয়ার নেতাকর্মীরা মোটেই তেমন আশ্চর্য নন।

এই পরিস্থিতিতে অরূপ বিশ্বাসকে নদিয়ার দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে নেত্রীর সুনির্দিষ্ট ‘অঙ্ক’ কাজ করেছে বলে মনে করছেন দলের অনেকেই। তাঁদের মতে, অরূপকে সামনে রেখে তিনি ফের পুরনো নেতৃত্বের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন। ফলে নতুনেরা দৌড়ে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়তে পারেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে নদিয়া জেলার কোনও দিনই সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। এই জেলায় তাঁর তেমন আনাগোনাও নেই। তৃণমূলের গোড়ার দিকের ‘পুরনো যোদ্ধাদের’ সঙ্গে অরূপের পরিচয় থাকলেও নতুন নেতারা বেশির ভাগই তাঁর অচেনা।

তবে কিছু দিন যাবৎ সাগরপাড়ার ফল চর্চায় থাকলেও সংখ্যালঘু এলাকা প্রসঙ্গে আলাদা করে নেত্রী কিছু বলেননি বলেই দলীয় সূত্রের খবর। তবে সাংগঠনিক রদবদলের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না জেলার তৃণমূল নেতারা। কারণ এর পর থেকে প্রতি শুক্রবার একটি করে জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে মমতা এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন।

তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের এখন একটাই কাজ। দলের প্রয়োজনে নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করে চলা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement