বিকোচ্ছে পতাকা, টুপি। বেলডাঙায়। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক
সেল, সেল, সেল! তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস এক দাম। সাত টাকা, সাত টাকা, সাত টাকা!
চৈতি দুপুরে সেলের এমন ঘোষণা শুনে চমকে যাচ্ছেন পথচলতি লোকজন। থমকে যাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরাও।
ভোটে রং ও রঙ্গের অভাব থাকে না। চৈত্রের সঙ্গে সেলের সম্পর্কও বহু পুরনো। কিন্তু ডান-বাম, এক দাম— এমন সেল কি এর আগে দেখেছে নবাবের জেলা?
মুচকি হাসছেন দোকানের মালিক অভিজিৎ মিশ্র, ‘‘বাজি রাখতে পারি, এমন ভাবনা এই শর্মার মাথাতেই প্রথম এসেছে। ভরা ভোটের বাজারে ফলও পাচ্ছি হাতেনাতে।’’
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা কলেজ রোডের পাশেই অভিজিতের দোকান। তিনি মূলত ফ্লেক্স, ফেস্টুনের কারবার করেন। আর ভোটের মরসুমে বিক্রি করেন রাজনৈতিক দলের পতাকা, ব্যাজ, টুপি ও উত্তরীয়।
এ বারেও তাঁর দোকানে পাশাপাশি দোল খাচ্ছে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের পতাকা। তবে সে সব ছাপিয়ে নজর কাড়ছে সাদা কাগজে কালো কালিতে বড় বড় করে লেখা— সেল!
বেশ কয়েক দিন ধরে সেই পোস্টার নজর কেড়েছে শহরের। এলাকার লোকজন বলছেন, ‘‘চৈত্রে সেল দেয়। সস্তায় জিনিসপত্রও কিনি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের পতাকারও যে সেল হয় তা এর আগে কখনও শুনিনি।’’
শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দা বিধান সরকার বলছেন, ‘‘ভোটের বাজার ধরতে ব্যাটা ভাবনাটা কিন্তু বেড়ে ভেবেছে!’’
অভিজিৎ জানাচ্ছেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেনা বহু পতাকা তাঁর দোকানেই ছিল। এ বারেও কলকাতা থেকে কিছু কেনা হয়েছে। সেগুলো অন্য সময় তেমন বিক্রি হয় না। এ দিকে, সামনে বৈশাখ। তাই লোকসভা ভোটের কাঠি পড়তেই তিনি ঠিক করেন, দোকান ফাঁকা করতে হবে। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ!
১৫ বাই ২৩ ইঞ্চির পতাকার সাধারণ দাম ৬ টাকা। সেলের বাজারে তা বিকোচ্ছে ৪.৭৫ টাকায়। ২০ বাই ৩০ ইঞ্চির পতাকা অন্য সময় বিক্রি হয় ৮ টাকায়। সেলে তার দাম ৭ টাকা।
৬০ বাই ৪০ ইঞ্চির আর এক রকম কাপড়ের পতাকার দাম ১০০ টাকা। সেলে মিলছে ৭০ টাকায়। সেই সঙ্গে ৯ টাকার টুপি ৭ টাকায়, ২০ টাকার উত্তরীয় ১৫ টাকায় ফুরিয়ে যাচ্ছে হু হু করে। অভিজিৎ বলছেন, ‘‘কলকাতা থেকে পাইকারি দামে এ সব কিনে আনি বলেই সেল দিতে পারছি।’’
বেলডাঙা শহর তৃণমূলের সভাপতি সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের কাউন্সিলর কিশোর ভাস্কর, সিপিএমের কাউন্সিলর মোহন ছাজেররা বলছেন, ‘‘ভালই তো! এলাকাতেই কম দামে ঠিকঠাক জিনিস পেলে ক্ষতি কী!’’ অভিজিৎ বলছেন, ‘‘এত দিন বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। তাই ওদের কিছু তুলিনি। মঙ্গলবারে প্রার্থী ঘোষণা হল। এ বার পদ্মের চাহিদা বাড়বে!’’
আপনি কোন ফুলে আছেন?
এ বার আর হাসি নয়, গম্ভীর মুখে অভিজিতের জবাব, ‘‘আমি মশাই কাস্তে, ফুল কোনও কিছুতেই নেই। যা করছি তা সবই কিন্তু ফলের আশায়।’’