মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা।
এআইসিসি মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে আবু হেনার নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। অথচ করিমপুরে কংগ্রেসের ঘুমই ভাঙতে চাইছে না।
শুধু যে ঘুম ভাঙছে না, তা-ই নয়। এআইসিসি যে আবু হেনাকে প্রার্থীর সিলমোহর দিয়েছে, তা-ও নদিয়ার এই প্রান্তিক বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতাদের অনেকের অজানা। ফলে দেওয়াল লেখা থেকে মিটিং-মিছিল কিছু শুরুই হয়নি। যা দেখে মুচকি হাসছেন বাম ও তৃণমূল নেতারা। এ দিনই তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান করিমপুরে এসে সভা করে গিয়েছেন।
ভৌগোলিক ভাবে নদিয়ায় হলেও করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সিপিএম ইতিমধ্যে বদরুদ্দোজা খানকে প্রার্থী করেছে। আবু তাহের খানকে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল। দুই দল প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আর প্রার্থীর নাম জেনেও শীতঘুমে করিমপুরের কংগ্রেস।
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে ১৯৫১ সালে প্রথম ও ১৯৫৭ সালে দ্বিতীয় লোকসভা ভোটে জিতে কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ খুদাবক্স দু’বার সাংসদ হয়েছিলেন। এর পর ১৯৬২ থেকে ২০০৪ সাল অবধি লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এক বারের জন্যও জিততে পারেন নি। ১৯৭২ সালে লোকসভা ভোটের উপনির্বাচনে নির্দল প্রার্থী সৈয়দ বদরুদ্দোজা জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ওই বছর বিধানসভা নির্বাচনে করিমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের অরবিন্দ মণ্ডল বিধায়ক হন। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৯ অবধি টানা এই কেন্দ্রে সাংসদ ছিলেন সিপিএমের। তার মধ্যে পাঁচ বার জিতেছেন মাসুদাল হোসেন ও দু’বার মইনুল হাসান।
এর পরে ফের চাকা ঘোরে। গত ২০০৪ ও ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ আসনে জেতেন কংগ্রেসের মান্নান হোসেন। গত লোকসভা ভোটেও মান্নান কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেছিলেন। সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান তাঁকে ১৮ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত করেন। তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ আলি প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার এবং বিজেপির সুজিতকুমার ঘোষ এক লক্ষের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এর পরে মান্নান তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে জোট করে লড়লেও ৩৯ বছর বামদের দখলে থাকা করিমপুর আসনটি কেড়ে নেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র।
এ বার কী হবে এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পরেও কংগ্রেস যে ভাবে শীতঘুম দিচ্ছে, সেটাও দেখার মতো। করিমপুর ১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ মণ্ডলের দাবি, ‘‘অধীর চৌধুরী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন শুনেছি। দলের নেতৃত্বের কথা মতো প্রত্যেক অঞ্চল সভাপতিকে দেওয়াল দখল করতে বলা হয়েছে।’’ সিপিএমের করিমপুর এরিয়া কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আশাবুল খাঁ বলেন, ‘‘কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই আমরা চলতে চেয়েছিলাম। ওরা আলাদা চলতে চেয়ে তৃণমূলের হাত শক্ত করছে।’’ আর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তরুণ সাহা প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেসকে। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস ধর্তব্যের মধ্যেই নেই। লড়াই যা হবে তা সিপিএমের সঙ্গেই।’’