—ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী শেষ বার নদিয়ায় প্রশাসনিক জনসভায় এসে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা ও করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মহুয়াকে যে জেলা থেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা হতে পারে তার ইঙ্গিত এর মধ্যেই পেয়েছিলেন দলের অনেকে। তখনই কানাঘুষো শুরু হয়েছিল।
স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেই জানিয়েছিলেন, মহুয়াকে কৃষ্ণনগরের জমি চেনাতে এবং এলাকার রাজনৈতিক তথা ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞ করতেই এই কাজ করেছেন দলনেত্রী। সম্প্রতি নদিয়ায় দলের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুব্রত মণ্ডল যে ক’টি সভা করেছেন সব জায়গাতে মঞ্চে অত্যন্ত সক্রিয় উপস্থিতি ছিল মহুয়ার। অনুমানই সত্যি হল। তাপস পালের বদলে করিমপুরের বিধায়ক মহুয়াকে এ বার কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থী করল তৃণমূল। মহুয়া নিজে এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি শুধু পরিশ্রম করে কাজটা করি। কিছু পাব ভেবে করি না। আমাকে কেন প্রার্থী করা হল তার উত্তর একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারবেন।’’
নদিয়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। মাঝেমধ্যে তা প্রকট হয়ে পড়ে। তার পর রয়েছে বিজেপি ফ্যাক্টর। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে জেলার অনেক জায়গায় বিজেপির প্রভাব বেড়েছে। লোকসভায় এই সব কিছু তাঁকে কতটা বিব্রত করবে জানতে চাওয়া হলে মহুয়া অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ও সব বাজে কথা। পঞ্চায়েতে বিজেপি টাকা দিয়ে সিপিএম আর কংগ্রেসকে কিনে নিয়ে ‘ওয়ান ইজ টু ওয়ান’ ভোট করিয়েছে। তাই কিছু জায়গায় জিতেছে। লোকসভা ভোট সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। এখানে এ সব কাজে দেবে না।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মহুয়া মৈত্রের নিজের বিধানসভা কেন্দ্র করিমপুর কিন্তু কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে না। এত দিন ধরে তৈরি করা জমি, ভোটার—কোনও কিছুর সুবিধা নিতে পারবেন না, এটা সমস্যা তৈরি করবে কিনা জানতে চাওয়ায় তাঁর উত্তর, ‘‘কৃষ্ণনগরের অলিগলি আমার পরিচিত। প্রথম যখন ২০০৯ সালে রাজনীতিতে আসি তখন কংগ্রেসের তরফ থেকে আমাকে এখানেই কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল। ফলে আমি এখানে নতুন নই।’’
২০১৬ সালের ৩ মার্চ করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার সাত দিন পরে ১০ মার্চ মহুয়া প্রথম করিমপুরে পা দিয়েছিলেন। ভোটের আগে মাত্র ৩৯ দিনে নিজের কেন্দ্রের ২৬৯ টি বুথে ভোটের প্রচারে প্রতিটি মানুষের দরজায় পৌঁছেছিলেন। তাঁর টানা, পরিশ্রসাধ্য প্রচার সবাইকে চমকে দিয়েছিল। একটানা ৩৯ বছর সিপিএমের দখলে থাকা করিমপুর দখল করেছিলেন বাম প্রার্থী সমরেন্দ্র নাথ ঘোষকে হারিয়ে। বিধায়ক হওয়ার পরে বিগত তিন বছরে এলাকায় উন্নয়নে বিভিন্ন দফতর থেকে প্রায় ১১০ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছেন। উন্নয়নের বেশ কিছু কাজও করেছেন। একাধিক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, সর্বস্তরের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে হয়তো মহুয়া মিশতে পারেন না, কিন্তু তিনি পরিশ্রমী এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় জেন না। এটা তাঁর শক্তির জায়গা।
তবে জেলা বিজেপির সহ সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস দাবি করেছেন, তৃণমূল যে প্রার্থীই দিক না কেন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে এ বার বিজেপি জিতবে। মহুয়া মৈত্র তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় বরং বিজেপির সুবিধাই হল। সিপিএমের তেহট্ট এলাকা কমিটির সম্পাদক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, “মহুয়া মৈত্রকে তাঁরদল প্রার্থী করেছে। কিন্তু এটা পঞ্চায়েত ভোট নয় যে, গায়ের জোরে সব ভোট ওরা নিজেদের বাক্সে ঢুকিয়ে নেবে। স্বচ্ছ নির্বাচন হলে এ বার ভোটের ফলে ওরা টের পাবে।”