সিপিএমের শান্তনু, বাকি রইল এক

বেশি ধাঁধাঁ  রয়ে গেল বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করতে না পারায়। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

কৃষ্ণনগরে প্রচারে লোকসভায় সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

অনেক টালবাহানাতেও আসন সমঝোতা হল না। প্রত্যাশিত ভাবে, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে গত বার পরাজিত শান্তনু ঝায়ের নামই ঘোষণা করল সিপিএম। সেই সঙ্গে ভোট কাটাকাটির অঙ্কটাও আগের চেয়ে জটিল হয়ে উঠল। বেশি ধাঁধাঁ রয়ে গেল বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করতে না পারায়।

Advertisement

যখন থেকে এটা পরিষ্কার হতে শুরু হয় যে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সমঝোতা ভেস্তে যেতে পারে, তখন থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল সিপিএমে। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে শান্তনুর পাশাপাশি ‘সংখ্যালঘু মুখ’ হিসাবে শোনা গিয়েছিল সামসুল ইসলাম মোল্লা এবং এসএম সাদির নাম। কিন্তু নানা অঙ্কে শান্তনুর পাল্লাই ভারী হয় শেষ পর্যন্ত।

কেন এই সিদ্ধান্ত?

Advertisement

বিশেষ করে যে কন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩৭ শতাংশ, সেখানে মুসলিম প্রার্থী না দিয়ে কেন গত বারের পরাজিত মুখের উপরেই ভরসা করতে হল বামেদের? সিপিএমের অন্দরের খবর, দল মনে করছে নানা কারণে সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। শুধু সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে তা ভাঙানো যাবে না। বরং সেখান থেকে যা ভোট বেরিয়ে আসতে পারে, তা এক মাত্র ‘রাজনৈতিক’ কারণে, ধর্মীয় কারণে নয়। শুধু সংখ্যালঘু মুখ সামনে এনে বিরাট ভোট টেনে আনা যাবে না। কিন্তু উল্টো দিকে হিন্দু ভোট হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

সিপিএম নেতাদের হিসেব বলছে, জেলায় বিজেপির উত্থান ও লাগাতার হিন্দুত্ববাদী প্রচারের ফলে ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। সেই জায়গায় যদি সংখ্যালঘু মুখ সামনে নিয়ে আসা হয়, হিন্দু ভোটারদের একাংশ মুখ ফিরিয়ে বিজেপিতে চলে যেতে পারে। নামে মার্কসবাদী দল হলেও সেই ঝুঁকিটাই নিতে পারল না সিপিএম।

যদিও সিপিএম নেতারা প্রকাশ্যে এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, গত বার ভোটে প্রবল মোদী-হাওয়ার সঙ্গে বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জুলুবাবু থাকা সত্ত্বেও প্রায় ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন শান্তনু। আর সেটা মাথায় রেখেই শেষ পর্যন্ত ‘পুরনো ঘোড়া’র উপরেই ভরসা রেখেছে দল। যদিও জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঠিক করে আমাদের রাজ্য কমিটি। তবে শান্তনুবাবু এক জন উচ্চশিক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। গত বার লড়াই করেছেন। পরিচিত মুখ। হয়তো এ সব দেখেই রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে মনোনীত করেছে।”

কংগ্রেস বা সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিলেও বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে থাকবে না। যে ত্রিমুখী লড়াইয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র সরগরম হতে পারে, তার মধ্যে তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থী দিয়ে দিল। রইল বাকি এক— বিজেপি। এই মুহূর্তে তাদের একাধিক প্রার্থীর নাম বাতাসে ভাসছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা অনেকেই এ বারও প্রাক্তন সাংসদ জুলুবাবুকেই চাইছেন। কিন্তু দলেরই একটা অংশ আবার মনে করছে, এ বার ‘জুলু-ম্যাজিক’ খাটবে না। কারণ, ২০০৫ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে জিতলেও এক বারও তিনি একা দলকে জেতাতে পারেননি। গত ভোটে প্রবল মোদী-হাওয়া সত্ত্বেও তিনি ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, যা পেয়ে জেতা অসম্ভব।

তৃণমূলের দাবি, এ বার সেই মোদী-হাওয়া অনেকটাই। জুলুবাবুর বয়স আরও পাঁচ বছর বেড়ে দাড়িয়েছে সাতাশিতে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান দুই দলের প্রার্থীই তুলনায় অনেক নবীন এবং টগবগে। তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র তো ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের অনেকটা চষে ফেলেছেন। তা সত্ত্বেও কেন ফের জুলুবাবুকে চাইছে বিজেপির একটা বড় অংশ? দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “জুলুবাবুর পরে যে অন্য দলের যে দু’জন সাংসদ হয়েছেন তাঁরা কেউই মানুষের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেননি। মানুষ তাঁর অভাব অনেক বেশি করে টের পাচ্ছে। তাই নিজেদের ভুল শুধরে মানুষ আবার আমাদের সকলের নেতা জুলুবাবুকেই জিতিয়ে আনবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement